হরেক জাতের আমের ইতিহাস
ম্যাংগিফেরা ইন্ডিকা (Mangifera indica) আমের বৈজ্ঞানিক নাম। ম্যাংগিফেরা গণের বিভিন্ন প্রজাতির গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এক প্রকার রসালো সুস্বাদু ফল। সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় একটি ফল। এমন কোন জাতি নাই যারা আম পছন্দ করে না। তাই একে ফলের রাজা বলা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান আছে যা মানবদেহের জন্য অনেক উপকার। এতে থাকা আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট, স্তন ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম আছে। আমের প্রায় কয়েকশ জাত রয়েছে। যেমন ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, আম্রপালি, হিমসাগর, লক্কণভোগ, নীলম্বরী, কালীভোগ, কাঁচামিঠা, গোপালখাস, কেন্ট, মোহনভোগ, জিলাপীভোগ, ক্ষীরশাপাতি, বারোমাসি, হাঁড়িভাংগা, সিঁদুরা, রাণীভোগ, বউভোলানী, দুধসর, মেহেরসাগর, গিরিয়াধারী, বৃন্দাবনী, চন্দানী, সুন্দরী, মিছরিকান্ত, লখনা, আদাইরা, কলাবতী।
উৎপত্তি
ভারতীয় অঞ্চলে প্রথম কোথায় আম দেখা গেছে তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আমাদের জনপদেই আমের আদিবাস, এ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা একমত। ইতিহাস থেকে জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ এ আলেকজান্ডার সিন্ধু উপত্যকায় এ ফল দেখে এবং খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ সময়ই এটি ছড়িয়ে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন দীপপুঞ্জ ও মাদাগাস্কারে। চীনা পর্যটক ইউয়েন সাং ৬৩২-৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এ অঞ্চলে ভ্রমণে এসে বাংলাদেশের আমকে পুরো পৃথিবীর কাছে পরিচিত করেন। ১৩৩১ খ্রিস্টাব্দ হতে আফ্রিকায় আম চাষ শুরু হয়। ১৬ শতাব্দীতে পারস্য উপসাগরে, ১৬৯০ সালে ইংল্যান্ডের কাচের ঘরে, ১৭ শতাব্দীতে ইয়েমেনে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে ক্যানারি দীপপুঞ্জে, ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে আম চাষের খবর জানা যায়। ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে হাওয়াই দীপপুঞ্জের মাটিতে প্রথম আমের আঁটি থেকে গাছ হয়। মোগল সম্রাট আকবর ভারতের শাহবাগের দাঁড়ভাঙায় ১ লাখ আমের চারা রোপণ করে উপমহাদেশে প্রথম একটি উন্নত জাতের বাগান সৃষ্টি করেন। ভারতের মালদাহ, মুর্শিদাবাদে প্রচুর চাষ হয়। বাংলাদেশের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, যশোর ও চাপাইনবাবগঞ্জে প্রচুর চাষ হয়ে থাকে।
পুষ্টিউপাদান
সব আমেই কম বেশি পুষ্টিউপাদান থাকলেও কোন জাতে কি মাত্রায় পাওয়া যায় তা নিয়ে গবেষণা করেছে একদল গবেষক। প্রধান ১০ টি জাতের আমের নমুনা সংগ্রহের পর তা বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান পরিষদের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করেছে। পুষ্টিগুণ বিবেচনায় সবার উপরে আছে ল্যাংড়া ও গোপালভোগ। মধ্যম মাত্রায় আছে চোষা আম। আম্রপালিতে সব ধরনের পুষ্টিগুণ আছে। ল্যাংড়া ও গোপালভোগের মত না হলেও ভালো পুষ্টিগুণ আছে হিমসাগর, ফজলি, ক্ষীরশাপাতসহ অন্যান্য আমেও। আমে বিদ্যমান উপাদানগুলোর মধ্যে হলো-
- শর্করা
- প্রোটিন
- ক্যালরি
- ফাইবার
- পটাশিয়াম
- সোডিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- ক্যালসিয়াম
- ফসফরাস
- ভিটামিন এ, সি, বি৬
উপকারীতা
- আমে বিদ্যমান ভিটামিন,মিনারেল ওআ্যনন্টিঅক্সিডেন্ট হজমে সহায়তা করে।
- আমে প্রায় ২৫ রকমের বিভিন্ন কেরাটিনোইডস উপকারী ব্যাকটেরিয়া আছে যা ইমিউন সিস্টেমকে সুস্থ ও সবল রাখে।
- আমে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকায় শরীরের স্নায়ুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখে। শরীরকে রাখে পুরোপুরি সতেজ। ফলে খুব দ্রুত ঘুম আসতে সাহায্য করে।
- আমে থাকা বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করে,হার্টকে সুস্থ ও সবল রাখে।
- ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে।
- আমে থাকা টারটারিক এ্যাসিড, ম্যালিক এ্যাসিড, সাইট্রিক এ্যাসিড শরীরে অ্যালকালাই বা ক্ষার ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- পটাশিয়াম হার্টবিট ও রক্তস্বল্পতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। হার্টবিট সচল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
- আমে বিদ্যমান ভিটামিন সি দাঁত ও হাড় গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- শরীরের ক্ষয়রোধ করে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- লোমের গোড়া পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ফলে নাকের উপর জন্মানো ব্ল্যাকহেড ও ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- চুল ও দাঁত মজবুত করে এবং মুখের কালো দাগ দূর করে।
বিভিন্ন আমের নামকরণ ও উপকারীতাঃ
আমের জাতের তালিকা দীর্ঘ। এগুলার বেশির ভাগের নামকরণের ইতিহাস অজানা। হাতে গোনা কয়েকটি সম্পর্কে জানা গেছে। কিছু আমের পরিচয়ের সাথে জড়িয়ে আছে ব্যক্তির নাম। স্থান, বিশেষ ঘটনা বা স্বাদের ভিত্তিতেও নির্ধারিত হয়েছে যেমন ক্ষীরের মত স্বাদ বলে নামকরণ হয়েছে ক্ষীরসাপাতি আম। রানীরা খেয়ে খুশি হয়েছে বলে রানীভোগ আম। কয়েকটি জাত কাঁচা অবস্থায় মিঠা বলে কাঁচামিঠা আম, দুধের সাথে খেতে ভালো তাই দুধসাগর আম নামকরণ করা হয়েছে। টিপে নরম করে মাথায় কিছুটা ছিদ্র করে চুষে খাওয়া আমের নাম চোষা আম। ঘরের বউকে পটিয়ে ফেলতে সক্ষম বলে নাম হয়েছে বউফুসলানি আম। আমের রং ও মিষ্টতা মন কেড়ে নেয় তাই এটি মনোহরা আম। ময়মনসিংহে এক প্রকার আম আছে রসুনের মত গন্ধযুক্ত,তা ই এটি রসুনে আম। গোলাপের সুবাস পাওয়া যায় বলে এটি গোলাপখাস নামে পরিচিত।
ফজলি আম
ফজলি আম আঁশবিহীন, রসালো, সুগন্ধযুক্ত ও সুমিষ্ট ফল। ফজলি আম গড়ে ১৩.৮ সে মি লম্বা, ৯.৫ সে.মি চওড়া এবং উচ্চতা ৭.৮ সে.মি হয়। গড় ওজন ৬৫৪.৪ গ্রাম। আমটি দেখতে লম্বা ও সামান্য চ্যাপ্টা। শাঁস হলুদ, আশঁবিহীন, রসালো, মিষ্টি। খোসা পাতলা ও পাকা অবস্থায় কিছুটা হলুদ হয়। আঁটি লম্বা, পাতলা ও চ্যাপ্টা। এই আমে শর্করার পরিমাণ ২৭.৫ শতাংশ। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বা ৭ জুলাই থেকে এই আম পাকে। সাধারণত জ্যাম ও আচার তৈরীতে এই আম ব্যবহৃত হয়।
উৎপত্তি
ফজলি আম দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বদিকে বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলা, বিহার এবং বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, কুষ্টিয়া জেলায় চাষ হয়।
নামকরণের ইতিহাস
ফজলি আমের সাথে জড়িয়ে আছে প্রৌঢ়া এক মহিলার নাম” ফজলু বিবি”। গৌড়ের এক কুঠিরে ছিল তার বাস। বাড়ির উঠানে তিনি একটা আম গাছ লাগিয়েছিলেন। ১৮০০ সাল তখন মালদাহের কালেক্টর রেভেন সাহেব ঘোড়ার গাড়ি চেপে গৌড় যাচ্ছিলেন। পথে তার জল তেষ্টা মেটানোর জন্য গ্রামের ঐ প্রৌঢ়া মহিলার কাছে জল খেতে চান। ফজলু বিবি নামে ঐ পৌঢ়া মহিলা জলের পরিবর্তে তাকে আম খেতে দিলেন। কালেক্টর সাহেব আম খেয়ে ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করলেন আমের নাম কি। ফজলু বিবি বুঝতে না পেরে নিজের নাম বলেন আর সেই থেকেই আমের নাম হয় ফজলি আম।
আম্রপালী
আম্রপালী আম সবারই কাছেই পরিচিত এক আম। এই আম লাল কমলা রঙের হয়। এই আমে মিষ্টির পরিমাণ ল্যাংড়া হিমসাগর আমের চেয়ে বেশি। অন্যান্য আমের তুলমায় এই আমে ২.৫-৩.০ গুণ বেশি বিটা ক্যারোটিন থাকে। এই গাছের জীবনকাল সংক্ষিপ্ত। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ১৬ টন।
নামকরণঃ
এই আমের নামকরণ নিয়ে লোককথা প্রচলিত আছে। ভারতে বহুল পরিচিত নর্তকীর স্মরণে “ আম্রপালী” নামকরণ করা হয়েছে। জেনে রাখা ভালো যে পালি ভাষায় আম্র অর্থ অম্ব। প্রাচীনকালে ভারতের বিহারে বৃজি নামে এক রাজ্য ছিল, যেটির রাজধানী বৈশালী। সেখানে রাজোদ্যানে আমগাছের নিচে এক কন্যাশিশুকে পাওয়া যায়। বাগানের পালক এই শিশুর ভরণপোষণের ভার নেন। পালকের মেয়ে বলে শিশুটির নাম হয়ে যায় অম্বপালি তথা আম্রপালী। সে অনেক সুন্দরী ছিল। বড় হয়ে সে সভানর্তকী হয়। পরবর্তীতে সে গৌতম বুদ্ধের বাণীতে আকৃষ্ট হয়ে ভিক্ষুকসংঘে যোগ দেয় এবং আমবাগান সংঘকে দান করে। তাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই ১৯৭১ সালে বিজ্ঞানীরা নীলম জাতের পুংমুকুলের সাথে দশেরী জাতের স্ত্রীমুকুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে যে সংকর জাতের আম উদ্ভাবন করা হয়, সেটার নাম রাখা হয় আম্রপালি।
উৎপত্তি
১৯৭১ সালে বিজ্ঞানী ড. পিযুষ কান্তি মজুমদার ভারতে এই জাতের আম উদ্ভাবন করেন এবং ১৯৮৪ সালে এই জাতের আম বাংলাদেশে আমদানি কারা হয়। এখন বাংলাদেশের রাজশাহী, সাতক্ষীরা, নাটোর সহ সব জেলায় চাষ করা হয়।
ল্যাংড়া আম
ল্যাংড়া আম অত্যন্ত রসালো ও মিষ্টতার পরিমাণ গড়ে ১৯.৭ শতাংশ। আমটির বোঁটা চিকন, আঁটি অত্যন্ত পাতলা। খাওয়ার অংশ গড়ে ৭৩.১ শতাংশ ও গড় ওজন ৩২০ গ্রাম। জুলাই মাসের শেষের দিকে এই আম পাকতে শুরু করে। ভিটামিন সি ও ফাইবার এ দুটি উপাদানই বেশি মাত্রায় পাওয়া যায় ল্যাংড়া আমে। সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রোটিন ও সোডিয়াম রয়েছে এই ল্যাড়া আমে। ভিটামিন সি ও ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিশেষ করে দেহের জন্য ক্ষতিকর কলেস্টেরল বা নিম্নঘনত্তের লাইপোপ্রটিন নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা অপরিসীম।
নামকরণ
ল্যাংড়া আমের নামকরণের পেছনে আছে এক ফকিরের গল্প। তার পায়ে সমস্যা ছিল। প্রথমে এই আম চাষ হতো মোগল আমলে দারভাঙা অঞ্চলে। ১৮ শতকে সেই ফকির এই আম চাষ করে এবং তার মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। ফলে নাম হয় ল্যাংড়া আম।
উৎপত্তি
আমটি ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে চাষ হয়। ভারতের গোয়া রত্নগিরি, পশ্চিমবংগ, বেংগালুর ও মুম্বাই এবং বাংলাদেশে কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে চাষ করা হয়।
গোপালভোগ আম
গোপালভোগ আম দেখতে মাঝারী আকৃতির লম্বা এবং কিছুটা গোলাকার হয়। এই আমের ওজন ২০৮ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই আমের বোটা শক্ত হয় এবং বোটার আশেপাশে হলুদ রং হয় পাকার সময়। এই আম আশবিহীন, শাঁস গভীর, কমলা রঙের সুমিষ্ট ফল। খোসা পুরু এবং আঁটি পাতলা। রসালো আমটির গড় মিষ্টতার পরিমাণ ২২.৬ এবং খাদ্যাংশ ৬০ শতাংশ। জৈষ্ঠ মাসের প্রথম থেকে পাকতে শুরু করে এই আম।
উৎপত্তি
গোপালভোগ আম দেশের প্রায় সব জায়গাতেই পাওয়া যায়। উৎকৃষ্টমানের গোপালভোগ আম নাটোর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে জন্মে থাকে। তাছাড়া ভারতের মালদাহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর প্রদেশে এই আম জন্মে থাকে।
হিমসাগর আম
হিমসাগর আম নাবি জাতের আম। এটি আষাঢ় মাসে পাকে অর্থাৎ জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাই মাসের শেষ অবধি পাওয়া যায়। এটি উৎকৃষ্ট জাতের আম। হিমসাগর আম কাঁচা অবস্থায় দেখতে হালকা সবুজ এবং পাকলে সবুজাভ হলুদ রঙের হয়। এটি মাঝারি ধরনের এবং এই আমের ত্বক মসৃণ। আটি মাঝারি ধরনের। শাস গাঢ় হলুদ বর্ণের, অনেকটা কমলা রং এর মত। সুগন্ধযুক্ত, রসালো, আঁশবিহিন মিষ্টি এই আমের চাহিদা বাংলাদেশের সর্বত্রই।
উৎপত্তি
হিমসাগর আম মূলত পশ্চিমবংগের আম। তাছাড়া এই আম বাংলাদেশের রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলাতেও চাষ হয়।
হারিভাঙ্গা
হারিভাঙ্গা আম বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত সুস্বাদু আম। আমটি দেখতে সুঠাম ও মাংসালো। আঁশবিহীন, শাঁস গোলাকার ও লম্বা। আমের তুলনায় শাঁস অনেক ছোট। আকারের তুলনায় অন্য আমের চেয়ে ওজনে বেশি। গড়ে ৩ টা আমে ১ কেজি হয়। চামড়া কুচকে যায় কিন্তু পঁচে না। ছোট থেকে পাঁকা পর্যন্ত একেক স্তরে একেক স্বাদ পাওয়া যায়। তবে এ আমটি বেশি না পাকানো ভালো। গাছের উচ্চতা কম হওয়ায় ঝড়ে আম কম পড়ে। ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি এই আম দিয়ে জ্যাম, জেলি, মোরব্বা, আচার, চাটনি, জুস তৈরী করা হয়। এই আমে প্রচুর ভিটামিন এ, সি, খনিজ পদার্থ ও ক্যালোরি আছে।
উৎপত্তি
হারিভাঙ্গা আমের উৎপত্তি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়ন থেকে।
নামকরণ
হারিভাঙ্গা আমর নামকরণের ইতিহাসও নাটকীয়। বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত জমির বাড়িতে একটি বাগান ছিল। রাজা তাজ বাহাদুর শিং সেখানে সুগন্ধিযুক্ত ফুল ও ফলের গাছ রোপণ করেছিলেন। সেই বাগানের এক জাতের আম, খোরগাছা ইউনিয়নের তেকানী গ্রামের পাইকার নফল উদ্দিনের বদৌলতে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি সেগুলো প্রত্যন্ত হাটে বিক্রি করতেন। একটি আম বেশ মিষ্টি ও সুন্দর হওয়ায় সেটির কলম এনে নিজ জমিতে রোপণ করেন। তার জমি ছিল বরেদ্র প্রকৃতির। শুকনা মৌসুমে গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার সুবিদার্থে তিনি সেখানে একটি হাঁড়ি বসিয়ে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু কে বা কারা হাঁড়ি ভেঙে ফেললেও গাছটি বেঁচে ছিল। পরে গাছটিতে আম ধরে। সেই আম খেয়ে মুগ্ধ হন স্থানীয় অনেকে। কোথা থেকে এল এই আম? তা খুজতে গিয়ে লোকমুখে রটে যায় হাঁড়ি ভাঙার ঘটনাটি। সেই থেকে এই আমের নাম হয় হারিভাঙ্গা।
১২ মাসি আম
বারি আম – ১১, বারোমাসি জাতের আম যেটা সারা বছরই পাওয়া যায়। বছরে তিনবার ফল দিয়ে থাকে। নভেম্বর, ফেব্রুয়ারি মাসে মুকুল আসে। মার্চ-এপ্রিল, মে-জুন, জুলাই-আগস্ট মাসে ফল আহরণ করা হয়। এটি দেখতে লম্বাটে হয়, লম্বা ১১.৩ সে.মি হয়। আমের গড় ওজন ৩০০-৩৫০ গ্রাম হয়। আমটি খেতে সুস্বাদু, মিষ্টির পরিমাণ ১৮.৫৫ শতাংশ। শাঁস গাঢ় হলুদ রঙের, আঁশ আছে। এক বছর বয়সেই মুকুল আসে। এই জাতের একটি গাছে বছরে ৫০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই জাতটি সম্পূর্ণ দেশীয় ,হাইব্রিড নয়। প্রাকৃতিকভাবে সংকরায়ণের ফলে সৃষ্টি।
উৎপত্তি
পাহাড়তলীতে অবস্থিত “বারি”র কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা এই আমের জাতটি উদ্ভাবন করেছেন। ২০১৪ সালের জুন মাসে জাতীয় বীজ বোর্ড এই জাতের আমের নিবন্ধন দেয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সরকারি খামার ও বাগানিদের কাছে বারি – ১১ আম এই জাতটির কলমযুক্ত চারা বিতরণ শুরু হয়েছে। বারি – ১১ এই জাতটি বাংলাদেশের সব উদ্যান গবেষণা কেন্দ্রে চাষ করা হচ্ছে। উচ্চফলনশীল এই জাতটি বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষ উপযোগী।
উপসংহার
প্রয়োজনীয় উপাদান সব আমেই কম-বেশি আছে। তবে বিশেষ কিছু উপাদান কয়েকটি আমে বেশি আছে। সেদিক থেকে ল্যাংড়া, ফজলি, চোষা ও গোপালভোগই সেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, মৌসুমী ফল হিসেবে অন্যান্য ফলের চেয়ে আমের প্রাপ্যতা ভালো। দেশে প্রায় ১ লাখ একর জমিতে এখন আমের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন। দেশের প্রায় সব জেলাতেই আম উৎপাদন হলেও সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে বৃহত্তর রাজশাহী, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাগঞ্জ, সাতক্ষীরা, যশোর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও পার্বত্য চট্টগ্রামভুক্ত জেলায়। উপকূলীয় লবণাক্ত ভূমিতেও এখন মিষ্টি আমের চাষ হচ্ছে। কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, উৎপাদনের দিক দিয়ে বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে রয়েছে।