Business Talk

হরেক রকম শাক ও তার উপকারিতা

মাদের দেশে যারা গরীব পেট পুরে খেতে পায় না কেবল তারাই নয় পুষ্টি জ্ঞানের অভাবে ধনীরাও অপুষ্টির শিকার। প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য সব সময় নামিদামী মাছ, মাংস, ডিম প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই বরং সস্তা দামের শীতের শাক-সবজি নিয়মিত খেলে রক্তস্বল্পতা, রাতকানা, অন্ধত্ব, মুখ বা ঠোঁটের কোণে ঘা এসব রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

 শাক ও তার উপকারিতা বলে শেষ হবার মতো নয় । শাক অতি সহজলভ্য। দামে সস্তা। আর আমাদের বিত্তবানদের কাছে সস্তা জিনিসের কদর নেই। অথচ শাক অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ ও উপকারী। আমরা এই পুষ্টিকর শাক ছেড়ে পোলাও, বিরিয়ানি ও তেহারি খেয়ে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি, সমস্যা ও পেটের পীড়ায় ভুগি। তারা যখন এসব রোগের শিকার হয়ে ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তার ওইসব খাবার বর্জন করে শাকসবজি খেতে বলেন। তত দিনে ক্ষতি যা হাওয়ার হয়ে গেছে। অথচ বিভিন্ন শাক মুখরোচক আবার উপকারী।

 পালংশাক

ছোটবেলায় পপাই দ্য সেইলর কার্টুনটা দেখেছেন নিশ্চয়ই? গাট্টাগোট্টা ভিলেন ব্লুটোর মোকাবেলা করতে পপাই এক কৌটা পালং শাক খেয়ে নেমে পড়তো। আর ব্লুটোকে একহাত দেখে নিতো। কার্টুনে মজার ছলে দেখানো হলেও বাস্তবে পালং  শাক ও তার উপকারিতা ঠিক এরকমই কড়া। পালংশাককে শাকের রাজা বলা হয়। এর পুষ্টিগুণের জন্যই রাজা বলা হয়। এই শাক থেকেই পাওয়া যাবে অনেক রোগবালাই থেকে মুক্তি। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পালং শাক খাওয়া একেবারেই উচিত না। যাদের পিত্তথলি বা গল ব্লাডারের ও কিডনি সমস্যা আছে তাদের নিয়মিত পালংশাক খাওয়া উচিত। এই শাকে জন্ডিস সারে। রক্ত পরিষ্কার করে। ডায়াবেটিস কমায়। পেটের অন্ত্র সচল রাখে। কিডনির পাথর গলাতে সাহায্য করে। পালংশাকে ভিটামিন এ,বি,সি, ও ই রয়েছে। আরো রয়েছে অ্যামাইনো এসিড।

 লালশাক

ছোটবেলায় একটা ছড়া পড়তাম” ডাল আর ভাত খেতে খুব লজা লাগে,লালশাক পাতে তুলে দাউ তার আগে। লালশাক আমাদের শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে যারা এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় ভুগছে তারা নিয়মিত লালশাক খেলে রক্তস্বল্পতা ও রক্তে হিমোগ্লোবিন পূরণ করে।

পুঁইশাক

কথায় বলে, শাকের মধ্যে পুঁই, আর মাছের মধ্যে রুই। তবে পুঁইশাক সবাই হজম করতে পারে না, পেট গরম হয়। পুঁইশাকের পাতার চেয়ে ডগায় বেশি ভিটামিন। খেতেও ভালো। পুঁইশাক বল, বীর্যবর্ধক এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ। পিত্তনাশক। পুঁইশাক দৈনিক এক বেলার বেশি না খাওয়া ভালো।

মুলাশাক

 অনেকে বলেন, মুলার চেয়ে মুলাশাক বেশি উপকারী। বাজারে মুলাশাক এসে গেছে। দাম একটু বেশি।  যাদের হাত-পা জ্বালাপোড়া করে তারা মুলাশাক খেলে উপকার পাবেন। মুলাশাক কফ ও বাত নাশক। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তারা মুলাশাক খাবেন। উপকার হবে।

সর্ষে শাক

 সর্ষে তেলের মতো সর্ষে শাকেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। শীতকালে এই শাকের ফলনও বেশ ভালো হয়। নিয়মিত এই শাক খেলে রক্তে উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া এই শাক দেহে ভিটামিন ডি তৈরি করতেও সাহায্য করে

লাউশাক

 পুষ্টিবিদরা বলেন, লাউ অপেক্ষা লাউশাক বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। আসলে লাউপাতা, ডগা ও লাউ সবই উপকারী। লাউশাক মায়ের বুকের দুধ বাড়ায়। অপুষ্টি দূর করে। মায়ের শরীরে শক্তি জোগায়। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। শরীরের ক্ষয় পূরণ করে।

কচুশাক

 কচুশাককে সবাই হেলাফেলা করে। অথচ কচুশাক অত্যন্ত ভিটামিন যুক্ত। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা চোখের জন্য কচুশাক খেতে বলেন। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে, তাদের কচুশাক খাওয়া উচিত। শহর-নগরে, গাঁওগ্রামে সর্বত্র কচুশাক পাওয়া যায়। গ্রামগঞ্জে কচুশাক কিনতে হয় না। যাদের প্রস্রাবে জ্বালা-যন্ত্রণা হয় তারা কচুশাক খেতে পারেন। উপকার হবে। কচুশাক মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে। এতে বেশি লৌহ আছে বিধায় মেয়েদের কচুশাক খাওয়া উচিত।

কলমি শাক

গাঁওগ্রামে খালবিলে পুকুরে সর্বত্র কলমি শাক হয়।কলমি দুই প্রকার ডাঙা কলমি ও জলো কলমি। ডাঙা কলমিকে কোনো কোনো অঞ্চলে ঢোল কলমিও বলে। এই ডাঙা কলমি কেউ খায় না। জলো কলমি পুকুরে ও খালবিলে পানির ওপর লতিয়ে চলে।  যাদের ফোঁটায় ফোঁটায় সর্বক্ষণ প্রস্রাব পড়ছে, তারা কলমি শাক ভাজা বা রান্না করে খেলে উপকার পাবেন। ডায়াবেটিস রোগেও কলমি শাক উপকারী। মেয়েদের হিস্টিরিয়া রোগেও কলমি শাক উপকারী। পেট ও পিত্ত ঠাণ্ডা রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। মায়ের বুকে দুধ বাড়ায়।হজমের সমস্যা বেশি থাকলে এই শাক না খাওয়াই ভালো। তবে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এই শাক।

হেলেঞ্চা শাক

 হেলেঞ্চা শাক ও কলমি শাক একই জাতের তবে হেলেঞ্চা শাক কলমি শাকের চেয়ে বেশি ভালো। হেলেঞ্চা শাকও খালবিল ও পুকুরে হয়। হেলেঞ্চা শাকও পিত্তনাশক এবং পেট ঠাণ্ডা রাখে। হেলেঞ্চা রক্ত পরিষ্কার করে। হজমে সহায়ক। ডায়াবেটিস রোগেও উপকারী। কবিরাজ ও বৈদ্যরা হেলেঞ্চার রস খেতে বলেন, যারা প্রমেহ বা ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে ভুগছে।

পাট পাতা

পাট পাতার বড়া খেতে খুবই ভালো। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পাট শাক খুবই উপকারী। এছাড়াও পেটের রোগ, সর্দি, কাশি এসব সারায় পাটপাতা। আর সিজন চেঞ্জে খুবই উপকারী এই পাতা।

বেতো শাক

 মুখের রুচি ফেরানো থেকে হজম শক্তি বাড়াতে  বেতো শাক ও তার উপকারিতা অনেক । এই শাক এখন খুব একটা বেশি পাওয়া যায় না। বেতো শাককে হিন্দিতে বলা হয় ‘বাথুয়া’। টক দই বিট নুন, জিরে ভাজা, রাই, সর্ষের গুঁড়ো দিয়ে এই শাকের রায়তা খেতে অবাঙালিরা খুবই ভাল বাসেন।

হিঞ্চে শাক

হিঞ্চে শাক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই শাকের স্বাদ তেতো। এই শাক শরীর ঠাণ্ডা রাখে, রক্ত পরিষ্কার করে। এই শাক সেদ্ধ করে সর্ষের তেল নুন দিয়ে মেখে ভাতে খেতে ভাল লাগে। এছাড়াও হিঞ্চে শাকের বড়া হয়। যাঁদের অ্যানিমিয়া রয়েছে তাদের এই শাক খেতে বলা হয়।

থানকুনিপাতা

 গ্রামদেশে মাঠে ঘাটে সর্বত্র পাওয়া যায় এবং থানকুনিপাতা খুবই উপকারী। বিশেষভাবে পেটের সর্বপ্রকার সমস্যা থানকুনিপাতা অমোঘ ওষুধ। কবিরাজ বলেন, থানকুনিপাতা দীর্ঘ জীবন দান করে। কাশি, অর্শ, লিভারের অসুখ, জন্ডিস, প্রস্রাবের সমস্যা, কৃমি, অজীর্ণ প্রভৃতি ভালো হয়। থানকুনিপাতা ভালো করে ধুয়ে, বেটে তাতে রসুন, জোয়ান, কাঁচামরিচ, গোলমরিচ, সামান্য লবণ, কয়েক ফোঁটা খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে মেখে গরম ভাতের সাথে খেলে পেটে যত বর্জ্য সব বেরিয়ে যায়। পাকস্থলীকে শক্তিশালী করে। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। আমাশয় হলে থানকুনিপাতা ছেচে রস করে খেলে ভালো হয়।

গিমা শাক

 জন্ডিস,জ্বর, লিভারের অসুখ, সর্দি-কফে উপকারে লাগে এই শাক। এই শাক স্বাদে একটু তেতো। খেলে মুখের অরুচি সারে। বেগুন আলু দিয়ে চচ্চড়ি, বেসন বা ডাল বাটা দিয়ে এই শাকের বড়া খেতে ভাল লাগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *