দেশী ফল সফেদার অবাক করা পুষ্টিগুন সম্পর্কে জেনে নিন!!!
সফেদা বেশ পরিচিত একটি দেশি ফল। এটি সম্পূর্ণ ফ্যাটমুক্ত। সফেদা একটি অন্যতম পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল। এই ফলটি পাকা অবস্থায় চিনির মত মিষ্টি এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু। বর্তমানে বাজারে খুব সহজ মূল্যে এই ফলটি পাওয়া যায়। দেশের প্রায় সর্বত্রই এই ফলটি পাওয়া যায়। তবে বর্তমান সময়ে বাণিজ্যিকভাবে এই ফলটির উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর মিষ্টি স্বাদ ছাড়াও এটি আমাদের শরীরে অনেক উপকার করে থাকে। সফেদার রয়েছে ওষুধি গুণ।
সফেদা বা ‘সবেদা’ (ইংরেজি: Sapodilla; বৈজ্ঞানিক নাম: Manilkara zapota। এটি এক প্রকার মিষ্টি ফল। ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে সফেদাকে বলা হয় ‘মিস্পেল’,হন্ডুরাস, এল-সালভাদর। ভারতে এর নাম ‘চিকু’ বা ‘চিক্কু’। পাকিস্তানে এর নাম ‘চিকু’ বা ‘আলুচা’। ভারতের অন্য কিছু অঞ্চলে যেমন- তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটক, অন্ধ্র প্রদেশ ইত্যাদিতে একে বলা হয় sapota। শ্রীলঙ্কায় এর নাম ‘sapathilla’ বা ‘ratami’। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ পূর্ব ভারতে এর নাম ‘sobeda/sofeda’ (সবেদা বা সফেদা)। বাংলাদেশে চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী ইত্যাদি অঞ্চলে “আলুর গোট” নামেও এটি পরিচিত। সফেদা গাছ বহুবর্ষজীবী, চিরসবুজ বৃক্ষ।সফেদা গাছ ৩০ মিটার কিংবা এর চেয়েও লম্বা হতে পারে। এর কাণ্ডের ব্যাস ১.৫ মি. পর্যন্ত হতে পারে। এর ছালে প্রচুর সাদা আঠালো কষ থাকে। যা ‘চিকল’ নামে পরিচিত। দুধের মতো কষগুলো বেশ আঠালো, তাই এক সময় চুইংগাম শিল্পের অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত হত। এক সময় চুইংগামের কাঁচামাল ছিল এর কষ। এর পাতা সুন্দর, মাঝারি আকারের, সবুজ ও চকচকে। সফেদা ফল বড় উপবৃত্তাকার ‘বেরি’ জাতীয়। এর ব্যাস ৫-১০ সেমি প্রশস্ত হয়। দেখতে অনেকটা মসৃণ আলুর মত। এর ভেতরে ২-৫ টি বীজ থাকে। ভেতরের শাস হালকা হলুদ থেকে মেটে বাদামি রঙের হয়। বীজ কালো এ ফলে খুব বেশি কষ থাকে। এটি গাছ থেকে না পাড়লে সহজে পাকে না। পেড়ে ঘরে রেখে দিলে পেকে নরম ও খাবার উপযোগী হয়। সারা বছরই সফেদা গাছে ফল ধরে। তবে সেপ্টেম্বর হতে মার্চ পর্যন- সবচেয়ে বেশি ফল পাওয়া যায়।
এই ফলের আদি নিবাস মেক্সিকোর দক্ষিণাংশ, মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল। পেটেনেস ম্যানগ্রোভ ইকো-অঞ্চলের উপকূলীয় ইউকাতানে এই গাছ প্রাকৃতিকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। স্প্যানিশ উপনিবেশ আমলে এটি ফিলিপাইনে নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মেক্সিকোতে এর ব্যাপক উৎপাদন হয়।
১০০ গ্রাম সফেদায় আছে ৮৩ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ৫.৬ গ্রাম আঁশ, ১৯৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৯. ৯ গ্রাম চিনি, ২১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম, ০. ৮০ মিলিগ্রাম লোহা, ১২ মিলিগ্রাম ফসফরাস ও ০.১০ মিলিগ্রাম জিংক রয়েছে। এ ছাড়া এতে ফোলেট, পাইরিডক্সিন, থায়ামিন, রিবোফ্লোবিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, ভিটামিন এ,ই, সি,ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন ধরনের এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। প্রচুর পরিমাণে শর্করা ও আমিষের পর্যাপ্ততা রয়েছে।
সফেদা ফলের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। অনেক উপকারি এই ফলে প্রচুর পরিমাণ পলিফেনলস যৌগ ট্যানিন থাকার কারণে শরীরে প্রদাহ প্রতিরোধ করে এবং জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকায়। সফেদা ট্যানিনের পরিমাণ আঙুর বা ডালিমের মতোই। নিয়মিত খেলে ওরাল ক্যান্সার প্রতিরোধ ও দাঁত ভালো থাকে।
সফেদার আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গ্যাস্ট্রিক ও বুক জ্বালাপোড়া কমায়। অন্ত্রের ক্যানসার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরিতে বাধা দেয়। এভাবে সফেদা ক্যানসার প্রতিরোধ করে। সফেদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, লোহা ও ফসফরাস, যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। এতে রয়েছে ভিটামিন এ ও সি যা ত্বকে সুন্দর ও উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। এ ফলে আরও রয়েছে ভিটামিন ই যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও ত্বককে কোমল করে তোলে।
চোখ ভালো রাখে। এ ছাড়া মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। এ ফলের স্নায়ু শান্ত এবং মানসিক চাপ উপশম করার ক্ষমতা রয়েছে। ডাক্তাররা অনেকেই অনিদ্রা , উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিকে সফেদা ফল খেতে বলেন। এতে অনিদ্রা , উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
সফেদা কফ বসে যাওয়া এবং কাশি থেকে উপশম করতে সাহায্য করে। শ্বাসকষ্ট দূর করে এবং ফুসফুস ভালো রাখে। শুধুমাত্র সফেদা ফল নয়। সফেদা গাছের পাতারও ঔষধি গুণ রয়েছে। সফেদা গাছের পাতা ছেঁচে সদ্য ক্ষত হওয়া স্থানে দিলে দ্রুত রক্তপাত বন্ধ হয়।
আধা পাকা সফেদা পানিতে ফুটিয়ে কষ বের করে খেলে ডায়রিয়া ভালো হয়। এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে। সফেদা নিয়মিত খেলে স্থূলতাজনিত সমস্যার সমাধান হয়। সফেদায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ, যা আমাদের শক্তি প্রদান করে।