সম্প্রতি বিশ্ব জুড়ে চালানো সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মেয়েদের মধ্যে ডায়বেটিস এর প্রবণতা মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়বেটিস এমন একটি রোগ, যা সময়ের সাথে সাথে মানুষকে আরও অসুস্থ করে তোলে।
রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে শরীরে ঠিক কী ধরণের সমস্যা হয় তা সম্পর্কে আমরা কমবেশি সকলেই জানি। নানা বিধি-নিষেধ মেনে চলার পরও সামান্য এদিক থেকে ওদিক হলেই তড়তড় করে বাড়তে থাকে রক্তে সুগারের মাত্রা! একবার ডায়াবেটিস ধরা পড়লে পছন্দের প্রায় সব খাবারই বাদ পড়ে খাদ্য তালিকা থেকে। বিশেষ করে মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার। সুগারের রোগীদের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। সে কারণে চিনি ও শর্করা জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। আর যদি খেতেই হয় তা হলে অবশ্যই পরিমাণে কম খেতে হবে। আবার অনেক সময় অতিরিক্ত মাত্রায় ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সুগার কমে যায়। এটাও ক্ষতিকারক। শুধু মিষ্টি নয়, রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও বেশ কিছু খাবার-দাবার এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি। আসুন জেনে নেওয়া যাক রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে মিষ্টি ছাড়া আর কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি…
দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার চাপে রান্নার সময় বাঁচাতে ফাস্ট ফুডের উপর বেশি ভরসা করছে বেশির ভাগ মানুষ। বার্গার, চাউমিন, এগ বা চিকেন রোল, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইতেই পেট ভরাচ্ছে অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদদের মতে, এই খাবারগুলি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়বে হু হু করে।
বাজারে এখন অনেক রকমের ‘রিফাইনড’ তেল পাওয়া যায়। বিজ্ঞাপনে এগুলি সম্পর্কে দাবি করা হচ্ছে, এই তেলে ভাজা খাবার স্বাস্থ্যকর। কিন্তু তা মোটেই সঠিক নয়। জানেন কি, এই সব তেলে ভাজা চিপস বা স্ন্যাকস জাতীয় খাবার রক্তে ক্ষতিকর কলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এরই সঙ্গে ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে।
কফি ব্লাড সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে বা কমিয়ে রাখে, এটা একটা গবেষণা থেকে জানা গেছে। কিন্তু উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন সুগার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাই অতিরিক্ত মাত্রায় কফি খাওয়া কখনোই উচিত নয়।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে কোনও প্যাকটজাত পানীয়, যেমন ফ্রুট জুস বা সফট ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলা জরুরি। এই পানীয়গুলির মধ্যে, বিশেষ করে ফ্রুট জুসে রয়েছে ‘ফ্রুকটোজ’ যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এড়িয়ে চলুন ভাত, হোয়াইট ব্রেড, পাস্তা। কারণ, এগুলি রক্তে শর্করার মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। ব্রাউন ব্রেড, ওটমিল বা এই জাতীয় খাবার খান যেগুলিতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা কম আছে। তবে অনেকেই ডায়বেটিস রোগীদের লাল চালের ভাত খেতে বলে থাকে। সে জন্য ডায়বেটিসের রোগীরা সাদা চালের পরিবর্তে লাল চাল খেয়ে থাকেন। লাল চাল খেলে সুগার কম পরিমাণে বাড়ে। তবে লাল চাল খাওয়ারও একটা পরিমাণ রয়েছে। অতিরিক্ত মাত্রায় লাল চাল খেলে তাও সাদা চালের মতো একই কাজ করবে। অর্থাৎ সুগার বেড়ে যেতে পারে। প্রচুর পরিমাণে লাল চাল খাওয়া যাবে না। আধা কাপ ভাতের সঙ্গে সবজি বা ডাল খেতে পারেন। কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় লাল চালের ভাত খাওয়া যাবে না।
অনেক সময় আমরা চর্বি কমাতে বা ওজন কমাতে ওটস খেয়ে থাকি। ওটস স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। কারণ ওটসে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা আমাদের পেট ভরে রাখতে সাহায্য করে। ওটস আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও স্বাস্থ্যগত দিক থেকে ওটস মিলের প্রচুর ভূমিকা রয়েছে। ওটস মিল্ক আপনি খেতেই পারেন। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে বানানো বা প্রক্রিয়াজাতকরণ ওটসে ফ্লেভার ও চিনি থাকে। তাই এগুলো খেলে ব্লাড সুগার বেড়ে যেতে পারে। তাই ওটস খেতে পারেন কিন্তু প্রক্রিয়াজাতকরণ ওটস কিছুতেই খাওয়া যাবে না।
দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় যেকোনো খাবার যেমন: পনির, দই ও লাচ্ছি খাওয়া যাবে না। কারণ এসব খাবারে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম থাকে সেই সঙ্গে ফ্যাটও বেশি পরিমাণে থাকে।বিশেষজ্ঞদের মতে, দই খেতে হলে ঘরে পাতা দই অথবা চিনি ছাড়া শুধু টক দই পরিমাণ মতো খেতে পারেন। বাজার থেকে কেনা নানা রকম ফ্লেভার যুক্ত দই না খাওয়াই ভাল। পুষ্টিবিদদের মতে, এগুলি ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই। আর দুধ খেলেও চিনি ছাড়া লো ফ্যাটযুক্ত দুধ খেতে পারেন। তাহলে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
অনেকেরই মুখরোচক খাবার খেতে ইচ্ছা করে। ডায়বেটিসের রোগীদের কী কোনো ইচ্ছে থাকতে পারে না? অবশ্যই ইচ্ছা থাকতে পারে। তবে এ জন্য চাইনিজ ফুড খাওয়া ঠিক নয়। চাইনিজ খাবারে বেশি মাত্রায় লবণ, তেল ও চিনি থাকে। তাই চাইনিজ জাতীয় খাবার খেলে সুগার বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া পেস্ট্রি, আইসক্রিম শুনলেই অধিকাংশ মানুষেরই জিভে জল আসে। কাপকেক, পেস্ট্রি, কুকিজ আপনাকে তৃপ্তি দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে!
বাজারে যেসব মধু, জ্যামে ‘আর্টিফিশিয়াল সুগার’ থাকে তা স্বাস্থ্যের জন্য চিনির মতোই ক্ষতিকর!
উচ্চ মাত্রায় চর্বিযুক্ত গোশত অর্থাৎ রেড মিট অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবে না। তবে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। চর্বিযুক্ত যেকোনো খাবার খেলেই সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তাই রেড মিট মেপে খেতে হবে। অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবে না। সব থেকে ভালো না খাওয়া।
সুতরাং বলা যায় শুধু চিনি,মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিলে চলবে না, বরং অতিরিক্ত তেল বা মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এই সব খাবারে থাকা ট্রান্স ফ্যাট ইনসুলিনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।