Business Talk

শুটকি মাছ কতটা স্বাস্থ্যকর

শুটকি মাছ কতটা স্বাস্থ্যকর

বাংলাদেশে অনেক এলাকায় শুঁটকি মাছ খাওয়ার প্রবণতা আছে। রুপচাঁদা, লইট্টা, ছুরি, ছোট চিংড়ি, গজার, পুঁটি, কাঁচকি ইত্যাদি মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। এটি বেশ জনপ্রিয় পদ। শুটকি মাছের একটি আলাদা গন্ধ ও স্বাদ রয়েছে। অনেকেই শুঁটকি মাছ খেতে খুবই পছন্দ করেন; অনেকে আবার শুঁটকি মাছের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। কারও কারও কাছে শুঁটকি মাছের ভর্তা ও নানা রকম পদ অত্যন্ত পছন্দনীয়। কথা হলো শুঁটকি মাছ কি খাওয়া খারাপ, নাকি এতে কোনো উপকারিতা আছে? শুঁটকি মাছ আমাদের শরীরের জন্য কতটুকু স্বাস্থ্যকর, তা আমাদের জানা নেই। এমনকি শুঁটকি মাছের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। ভালো মানের সতেজ মাছ কোনো কৃত্রিম প্রিজারভেটিভ ছাড়া শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে শুঁটকি মাছ হয় সম্পূর্ণভাবে একটি প্রাকৃতিক খাবার।

 

খাদ্য সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে অনেক পুরোনো একটি পদ্ধতি হচ্ছে রোদে শুকিয়ে খাদ্য সংরক্ষণ। মাছ যখন শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়, তখন তাকে আমরা শুঁটকি মাছ বলে থাকি। মাছ রোদে শুকানো হলে মাছের যে জলীয় অংশ থাকে, তা শুকিয়ে যাওয়ার ফলে মাইক্রোঅরগানিজম জন্মাতে পারে না এবং মাছকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।

 

আসুন, জেনে নিই শুটকির পুষ্টিউপাদান সম্পর্কে এবং কোন ধরনের শুঁটকিতে কী উপাদান আছে?

শুটকিতে থাকে প্রোটিন,অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট,সোডিয়াম,ফসফরাস,ভিটামিন বি১২,সেলেনিয়াম,নায়াসিন,পটাশিয়াম।

প্রতি ১০০ গ্রাম ছোট চিংড়ির শুঁটকিতে থাকে ৬২.৪ গ্রাম প্রোটিন, ৩৫৩৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩৫৪ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২৮ গ্রাম লৌহ ও ২৯২ ক্যালরি।

প্রতি ১০০ গ্রাম ছুড়ি শুঁটকিতে থাকে ৭৬.১ গ্রাম প্রোটিন, ৭৩৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৭০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৪ দশমিক ২ মিলিগ্রাম লৌহ, ৩৮৩ ক্যালরি।

প্রতি ১০০ গ্রাম টেংরা শুঁটকিতে থাকে ৫৪.৯ গ্রাম প্রোটিন, ৮৪৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ৫ মিলিগ্রাম লৌহ ও ২৫৫ ক্যালরি।

প্রতি ১০০ গ্রাম লইট্টা শুঁটকিতে থাকে ৬১.৭ গ্রাম প্রোটিন, ১৭৮১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২৪০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২০ মিলিগ্রাম লৌহ ও ২৯৫ ক্যালরি।

প্রতি ১০০ গ্রাম ফাইস্যা মাছের শুঁটকিতে থাকে ১১ গ্রাম প্রোটিন, ১১৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪৭৮ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ১৮ মিলিগ্রাম লৌহ ও ৩৩৬ ক্যালরি।

 

আমরা জানি দেহের গঠন, ক্ষয়পূরণসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রোটিন একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। শুঁটকি মাছ উচ্চমানের প্রোটিনের ভালো উৎস। এতে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ প্রোটিন পাওয়া যায়। শুঁটকি মাছের প্রোটিনে যে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে, তা প্রায় ডিমের অ্যামিনো অ্যাসিডের সঙ্গে তুলনীয়।

শুঁটকি মাছে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে থাকা সোডিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া নার্ভ ও মাংসপেশির সঠিক কার্যক্রমের জন্য সহায়তা করে। শুটকির মধ্যে থাকা ফসফরাস আমাদের হাড়, দাঁত ও ডিএনএ এবং আরএনএ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুটকিতে আছে ভিটামিন বি১২ যা  স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা সঠিক রাখে এবং লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে। সেলেনিয়াম শরীরে খুব কম পরিমাণে প্রয়োজন হয়। এটি প্রোটিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এনজাইম তৈরিতে অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া দেহে কোষ ধ্বংস প্রতিরোধ করে। এগে থাকা নায়াসিন দেহে খাবার থেকে শক্তি তৈরি করে। এ ছাড়া স্নায়ুতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র ও ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

শুঁটকি মাছে কোলেস্টেরল ও সেচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড কম থাকে। তাই এটি হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া শুটকিতে আছে পটাশিয়াম যা দেহে পানির সমতা বজায় রাখে। সেই সঙ্গে আমাদের স্নায়ুতন্ত্র, মাংসপেশি ও হৃৎপিণ্ডের সুষ্ঠু কার্যক্রমের জন্য এটি প্রয়োজনীয়।

 

সতর্কতা

শুটকি মাছ খাওয়ার আগে কিছু বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। যেমন-

শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের সময় প্রচুর লবণ দেওয়া হয়। তাই উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগীদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।

বাত ও কিডনির রোগীদের বেশি শুঁটকি খাওয়া উচিত নয়।

যাঁদের কিডনিতে ক্যালসিয়াম পাথর হওয়ার ঝুঁকি আছে, তাঁরাও শুঁটকি এড়িয়ে চলবেন।

ইদানীং শুঁটকি সংরক্ষণে ক্ষতিকর কীটনাশক ডিডিটি-জাতীয় উপাদান দেওয়া হয়। তাই রান্নার আগে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে বারবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন।

বাড়িতে শুঁটকি সংরক্ষণ করতে হলে মাঝে মাঝে কড়া রোদে দেবেন।

 

উপরের সতর্কতামূলক কথাগুলা মেনে শুটকি খেতে পারেন কারণ শুটকিতে থাকা পুষ্টিউপাদান অনেক উপকারী। শুটকি মাছে তাজা মাছের তুলনায় আমিষ, প্রোটিন ও খনিজ লবণের পরিমাণ অনেক বেশি। ক্যালসিয়াম ও লৌহের পরিমাণও অনেক। ছোট চিংড়ির শুঁটকিতে লৌহের পরিমাণ বেশি। রক্ত স্বল্পতা ও গর্ভবতী নারীরা এটি খেলে উপকারই পাবেন। যাঁরা দুধ খেতে পারেন না বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, তাঁরা প্রোটিনের বিকল্প উৎস হিসেবে মাঝে মাঝে শুঁটকি খেতে পারেন। তাছাড়া যারা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ডায়েট করছেন, তাঁরা প্রোটিনের উৎস হিসেবে শুঁটকি মাছ খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন। কারণ এতে ক্যালরি কম থাকে।

১০০ গ্রাম শুঁটকি মাছ থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রোটিন এবং ৩০০ ক্যালরি পাওয়া যায়। কিন্তু সমপরিমাণ গরুর মাংস থেকে প্রায় দ্বিগুণ ক্যালরি এবং তুলনামূলক কম প্রোটিন পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *