লেটুস পাতা আমরা কম বেশি সবাই চিনি। লেটুস বা লেটুস পাতা খুবই উপকারী একটি সবজি। বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে এর ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লেটুস কাঁচাই খাওয়া যায়। খেতে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হওয়ায় লেটুস পাতা পছন্দের তালিকায় রাখছেন অনেকেই। লেটুস পাতার বৈজ্ঞানিক নাম লাকটুসা স্যাটিজ এল। লেটুস পাতার আরেক নাম হলো আইসবার্গ লেটুস। এই অদ্ভুত নামের কারণ হলো আগে কার দিনে লেটুস বা যে কোনও শাক ফ্রিজে না রাখা হলে তা নষ্ট হয় যেত। বিংশ শতাব্দীতে সব জায়গায় ফ্রিজ পাওয়া যেত না। তাই ক্যালিফোর্নিয়ার লোকেরা বরফের মাধ্যমে শাকগুলো সংরক্ষণ করত। তখন থেকেই এর নাম আইসবার্গ। ইতিহাসবিদরা বলেন, এ পাতাটির চাষ প্রথম মিশরীয়রা শুরু করেছিল। প্রথমে পাতাটি শাক হিসেবে চাষ হতো। এমনকি এই পাতার বীজ থেকে তেলও বের করা হতো। লেটুস একটি পাতা জাতীয় সবজী।
লেটুস পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। এই পাতার মধ্যে থাকে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি-৬, আয়রন,পটাসিয়াম,বিটা ক্যারোটিন ইত্যাদি।বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম লেটুসে রয়েছে ১৫ ক্যালোরি, ২৮ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১৯৪ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ২.৯ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.৪ গ্রাম প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম।
লেটুস পাতা ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। কারণ এর মধ্যে বিটা ক্যারোটিন ও লুটিনের মত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। এই ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলি ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি হ্রাস করে।
লেটুসপাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন আছে। এ দুটি উপাদান কোলেস্টেরলের অক্সিডেশনকে বাধা দেয় এবং কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। ফলে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃৎপিণ্ড ভালো থাকে। শুধু তাই নয় কাঁচা বা ভাজা লেটুসপাতার সালাদ রক্ত পরিষ্কার করে, হৃৎপিণ্ডের শিরা-উপশিরার দেয়ালে চর্বি জমাট বাঁধতে বাধা দেয়।
লেটুস পাতা ঘুমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে লেটুস পাতা খান তাহলে আপনি অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়বেন। কারণ, এর মধ্যে ল্যাকট্যাক্যারিয়াম নামক একটি উপাদান থাকে ঘুমাতে সাহায্য করে।
কিডনির সমস্যার জন্য যেসব রোগীদের প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় তাদের জন্য লেটুসপাতা ভীষণ উপকারী। হাত-পা ফুলে যাওয়া, কিডনির পাথর, কিডনির কার্যহীনতা, মূত্রথলির ইনফেকশন ও কিডনির ব্যথায় লেটুসপাতা উপকারী। এই পাতায় থাকা সোডিয়াম ভিটামিন ‘বি’ ওয়ান, ‘বি’ টু, ‘বি’ থ্রি শরীরের যেকোনো অঙ্গে পানি জমে যাওয়া রোধ করে। লেটুসপাতাতে রয়েছে ৯৫.৫ গ্রাম পানি। এই পানি রক্তের লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেতকণিকা, অনুচক্রিকা ও অন্যান্য উপাদানকে সুস্থ-সবল রাখে। এতে পানির পরিমাণ বেশি হওয়ার জন্য মোটা ব্যক্তিদের চর্বি ও ওজন কমায়। লেটুসপাতায় ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে লেটুসপাতার গুরুত্ব অনেক বেশি। ত্বকের কোথাও কেটে বা ছিঁড়ে গেলে এই পাতাকে থেঁতলে ব্যথার স্থানে লাগালে ব্যথা ভালো হয়। লেটুসপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। লেটুসপাতা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যানমিয়া বা রক্তশূন্য রোগীদের জন্য লেটুসপাতা উত্তম খাবার। গর্ভবতী মায়েরা কাঁচা লেটুসপাতা খেলে মা ও শিশু উভয়ের শরীরেই রক্তের মাত্রা বাড়ে। নারীদের ঋতু চলাকালে যে রক্ত বের হয়ে যায়, সে সময় আয়রনের প্রয়োজন হয়। গর্ভবতী অবস্থাতেও আয়রনের প্রয়োজন পড়ে। তাই খাবারের সঙ্গে পছন্দমতো উপায়ে লেটুস ব্যবহার করুন। পেট ভার হয়ে থাকা, গ্যাস হওয়া, ক্ষুধা না লাগা, অ্যাসিডিটি—এই সমস্যাগুলো দূর করতে নিয়মিত লেটুস পাতা খান। বার্ধক্য আসে দেরিতে, ত্বকে বলিরেখাও পড়ে না। ঠাণ্ডাজনিত অসুখ হাঁচি, কাশি, কফ, হাঁপানি ও ফুসফুসের ইনফেকশন দূর করতে সালাদে প্রতিদিন লেটুসপাতা খেতে পারেন। খুব অল্প পরিমাণ প্রোটিন থাকলেও প্রতিদিন পেতে লেটুস একটি উপায় হতে পারে। প্রোটিন দেহের পেশি গঠনে মূল ভূমিকা রাখে। তাই সালাদে শিমের বীচির সঙ্গে লেটুস ব্যবহার করলে প্রচুর প্রোটিন পাবেন। চোখের ইনফেকশনজনিত সমস্যায় (যেমন—চোখ ওঠা) এক বা দুই লিটার পানিতে সামান্য লেটুসপাতা (৫০ গ্রাম) প্রায় ছয় মিনিট ফুটিয়ে সেই পানিতে চোখ ধুলে চোখ ওঠা দ্রুত ভালো হয়। চোখের অতিরিক্ত পরিশ্রমের পরও এই ফুটানো পানি ঠাণ্ডা করে ব্যবহার করলে চোখের ক্লান্তি দূর হয়। লেটুসপাতায় ভিটামিন কে আছে। ভিটামিন কে হাড়ের মেটাবলিজম বাড়ায়। লেটুসপাতা দ্রুত হাড় ক্ষয় হওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে। নিয়মিত ক্যালসিয়াম পেতে খেতে পারেন লেটুস। হাড় এবং দাঁতের গঠনে ক্যালসিয়ামের বিকল্প নেই। অন্যান্য ক্যালসিয়ামপূর্ণ খাবারের সঙ্গে লেটুস মেশাতে পারেন। লেটুসে কয়েক ধরনের ভিটামিন ‘বি’ রয়েছে। তাই লেটুস খেতে পারেন। রক্তে পটাসিয়ামের পরিমাণ অতিমাত্রায় কমে গেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে। লেটুস পাতা থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পটাসিয়াম পাওয়া যায়। খুশকির বিরুদ্ধেও কাজ করে এই পাতা। অনেক শ্যাম্পুতে লেটুসপাতার গুঁড়া ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘ সময় রৌদ্রে থাকলে ত্বকে কালচে পোড়া ভাব হয়। লেটুসপাতা থেঁতলে ত্বকে দিলে ত্বকের উপকার হয়।
উচ্চ আন্টিএক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ লেটুস প্রধানত সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। একে চিকেন বা চিস বা পটেটোর রোল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কাঁচা খেলেই বেশি উপকার পাবেন। তাছাড়া এটি বার্গারে,নুডুলসে,পাস্তায়,সুপে ব্যবহার করা হয়। স্যুপে একটি টেক্সচার এবং মিষ্টি স্বাদ যোগ করে এটি। লেটুসে পানি রয়েছে, তাই আপনার কোন প্রিয় ফলের সাথে কয়েকটি লেটুস পাতা দিয়ে ব্লেন্ড করে জুস করে খেতে পারেন। এটি পেস্ট করে সস তৈরী করে খাওয়া যেতে পারে। অনেক এটি ভর্তা, ভাজি করেও খেয়ে থাকে।
তবে অতিরিক্ত কেন কিছুই ভালো না। লেটুস যেভাবেই খান পরিমাণ মত খান এবং সুস্থ থাকুন।