Business Talk

মাখনের অজানা দারুণ সব ব্যবহার ও উপকারীতা

মাখনের অজানা দারুণ সব ব্যবহার উপকারীতা

সকালের খাবারে পাউরুটিতে মাখন না হলে অনেকের নাস্তাই হয় না। সকালের নাশতা কিংবা পাস্তা তৈরিতে অন্যান্য উপাদানের সাথে প্রয়োজন হয় মাখন।বেকিংয়ের কাজে মাখনের গুরুত্ব সবচাইতে বেশি। এই মাখন বা বাটার আপনি ব্যবহার করতে পারেন দৈনন্দিন অনেক কাজে, যার বেশিরভাগই আমাদের অজানা। তাছাড়া মাখনের উপকাররিতাও অনেক। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক মাখন কি এবং মাখনের অজানা দারুণ সব ব্যবহার ও উপকারীতা সম্পর্কে।

 

মাখন একটি দুগ্ধজাত বা দুধের পণ্য, যা সাধারণ দুধ বা দুধের প্রক্রিয়াজাত দুগ্ধ ক্রীম থেকে তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত কোন খাবারে মেখে খাওয়া হয়। এছাড়া রান্না করতে যেমন, কিছু ভাঁজতে, সস তৈরিতে অথবা খাবারে বিশেষ সুঘ্রান আনতে মাখন ব্যবহৃত হয়। মাখনে চর্বি, পানি এবং দুগ্ধ প্রটিন থাকে।

মাখন সাধারণ গরুর দুধ দিয়ে তৈরি হয়। এছাড়া মাখন অন্য প্রাণী যেমন, ভেড়া, ছাগল, মহিষের দুধ দিয়েও তৈরি করা হয়। এতে কখনও কখনও লবণ, সুগন্ধি, প্রিজার্ভেটিবও ব্যবহার করা হয়। মাখন দেখতে হলুদ রঙের তবে এটির রঙ গাঢ় হলুদ থেকে সাদা রঙের হতে পারে। এর রঙ নির্ভর করে দুধের উপর এবং ঐ প্রাণীর খাদ্যাভ্যাসের উপর। অনেক সময় প্রস্তুতকারীরাও রঙ মিশিয়ে থাকে।

 

মাখন প্রতিদিনের খাবারে দরকারি উপকরণ। তেলের চেয়ে মাখন খাবার তৈরিতে কম পরিমাণে ব্যবহার হয়। এ ছাড়া তেলের খাবারের চেয়ে মাখনের খাবারের স্বাদ ও পুষ্টি বেশি। তাই তেলের পরিবর্তে মাখন ব্যবহার করতে পারেন। মাখন খনিজ উপাদান শোষণে সাহায্য করে, যার ফলে আমাদের ক্ষুধাও কমিয়ে আনে। এতে থাকা কে-২ ভিটামিন শরীরের চর্বিকে দ্রবীভূত করতে পারে। এতে আছে ভিটামিন এ। উচ্চমাত্রায় বিটা ক্যারোটিন থাকায় মাখন চোখের জন্য উপকারী। চোখের ছানি গতিরোধ করতে, কোষের বৃদ্ধিতে, ক্যানসারের আশঙ্কা কমাতে সাহায্য করে। মাখনে থাকা ভিটামিন ডি হাড়ের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় মাখনে রয়েছে ভিটামিন ই, যা চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী। এটি বাচ্চাদের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র বিকাশের জন্যও উপকারী। মাখনে ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, তামা, সেলেনিয়াম, লরিয়িক অ্যাসিড এবং ক্রোমিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলির চিহ্ন রয়েছে।খনিজগুলি কার্যকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং আপনার বাচ্চাকে ক্ষতিকারক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। মাখনের মধ্যে উপস্থিত লরিক অ্যাসিডগুলি আপনার বাচ্চাকে ছত্রাকের সংক্রমণ এবং ক্যান্ডিডা বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। মাখন স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের একটি দুর্দান্ত উৎস। শিশুদের সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেহে প্রাকৃতিকভাবে ঘটে যাওয়া স্টেরয়েডগুলিকে সংশ্লেষ করতে সহায়তা করে। এটি হৃদরোগ, মানসিক অসুস্থতা এমনকি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করে।

 

অতি পরিচিত এই উপাদানটির  কয়েকটি ব্যবহার। এখানে  তুলে ধরা হলো।

হোক ঝাল কিংবা মিষ্টি, যেকোন ধরনের খাবার তৈরিতে অবশ্যই সবসময় আন-সল্টেড মাখন ব্যবহার করতে হবে। কখনোই সল্টেড মাখন নয়। আন-সল্টেড তথা লবণবিহীন মাখন ব্যবহারে খাবারের স্বাদ পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায়। বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবারের। কিন্তু মাখন যদি সল্টেড হয়, তা খাবারের স্বাদে অনেকটা পরিবর্তন এনে দেয়। এছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ি খাবার তৈরির সময় লবণ যোগ করা কোন বিষয় নয়।

প্রথমে প্রয়োজন মতো মাখন গলিয়ে নিন। এতে পছন্দসই ধনিয়া বা পুদিনা পাতা, মশলা অথবা পনির মিশিয়ে নিন। এবারে আইস কেসে মশলা মিশ্রিত মাখন ঢেলে রেফ্রিজারেটরে রেখে দিন। এটা হল কম্পাউন্ড মাখন। রান্নার সময় এই কম্পাউন্ড মাখনের একটি কিউবই খাবারের স্বাদ বদলে দেবে।

কিন্তু এই মাখনের ব্যবহার কি শুধু মাত্র খাওয়া পর্যন্তই। মোটেই নয়। এই মাখন বা বাটার আপনি ব্যবহার করতে পারেন দৈনন্দিন অনেক কাজে, যার বেশিরভাগই আমাদের অজানা। জানতে চান কী সেই কাজগুলো? চলুন তবে জেনে নেয়া যাক মাখনের অজানা দারুণ সব ব্যবহার সম্পর্কে।

 

দরজার কব্জা পুরোনো হয়ে গেলে ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ করে যা খুবই বিরক্তিকর। হাতের কাছে তেল বা অন্য কিছু না পেলে কব্জায় খানিকটা মাখন লাগিয়ে দিন। দেখবেন শব্দ বন্ধ হয়ে গিয়েছে

 

আঠা দিয়ে কোনো কাজ করছেন, হাতে লেগে গেলো। আপনি সাবান ও পানি দিয়ে এই আঠা তুলতে পারবেন না। প্রথমে একটু মাখন লাগিয়ে নিন আঠার উপর। খানিকক্ষণ ঘষে নিলেই দেখবেন দূর হয়ে গিয়েছে আঠা। এরপর সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে পারবেন।

 

অনেকেই ক্যাপস্যুল গিলতে পারেন না। দেখা যায় পানি পান করলেও তা গলায় গিয়ে আটকে থাকে যা কিছুতেই গেলা যায় না। এই সমস্যায় পড়তে না চাইলে ক্যাপস্যুলে একটু মাখন লাগিয়ে নিন। ব্যস, সমস্যার সমাধান।

 

রুক্ষ শুষ্ক ত্বকের যত্নে মাখনের তুলনা নেই। ত্বক ফেটে যাওয়া ও শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ত্বকে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন মাখন। এছাড়াও ত্বকে মাখনের ব্যবহার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। পুরোনো কাটাছেড়ার দাগের উপর নিয়মিত মাখন ব্যবহার করলে দাগ দূর হয়।

 

চীজ ব্যবহারের পর ফ্রিজে রাখার আগে এতে মাখন লাগিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। এতে করে চীজ অনেকটা সময় সংরক্ষণ করতে পারবেন।

 

নুডলস বা পাস্তা সেদ্ধ করার সময় পানিতে সামান্য বাটার দিয়ে দিন। এতে করে নুডলস বা পাস্তা বেশি সেদ্ধ হয়ে গেলেও একসাথে লেগে থাকবে না। বেশ ঝরঝরে হবে।

 

অনেক সময় আংটি চুড়ি আঙুল বা হাতের কবজি থেকে টেনেও খোলা যায় না। টানাটানি বাদ দিয়ে আঙুলে ও কব্জিতে একটু মাখন মাখিয়ে নিন। খুব দ্রুতই খুলে ফেলতে পারবেন আংটি বা চুড়ি।

 

মাখন সঠিকভাবে সংরক্ষনে ভালো থাকবে অনেকদিন।খাবার হিসেবে মাখন বেশ প্রাচীন বলা চলে। প্রাচীন রোমান সভ্যতা ও প্রাচীন আফ্রিকায় মাখন খাওয়ার প্রথা সম্পর্কে জানা যায়। এ ছাড়া শীতপ্রধান দেশে মাখন সংরক্ষণ সহজ ছিল বলে খাওয়ার প্রবণতাও দেখা যেত বেশি। আবার সমুদ্র অভিযানের সময় নাবিকেরা সঙ্গে মাখন নিতে পছন্দ করতেন। কারণ, লবণ দিয়ে এটি সংরক্ষণ সহজ এবং মাখনে শরীরে শক্তিও ফিরে আসত দ্রুত। তিন উপায়ে মাখন সংরক্ষণ করা যায়। ফ্রিজে রেখে, বরফ করে ও মুখ বন্ধ পাত্রে ঘরোয়া তাপমাত্রায় সহজেই মাখন সংরক্ষণ করা যায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফ্রিজে বা বরফ করে মাখন রাখা হয়। আর এতে মাখনের স্বাদ ও গন্ধের কোনো পরিবর্তনও হয় না। মাখন ফ্রিজে তিন মাসের মতো ভালো থাকে। মাখন দীর্ঘদিন ভালো রাখতে বরফ করে রাখতে পারেন। এর জন্য মাখন ছোট ছোট টুকরা বা কিউব করে মোড়কে মুড়িয়ে মুখ বন্ধ পাত্রে রাখতে পারেন। এতে প্রয়োজনে কয়েকটি টুকরা নামিয়ে বাকিগুলো সঙ্গে সঙ্গে তুলে রাখতে পারবেন। এতে মাখন একেবারে সতেজ থাকবে। তবে বরফ করা মাখন অনেক আগে নামানো যাবে না। তাহলে দ্রুত গলে যাবে। তাই খাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে নামাতে হবে। আর ননিযুক্ত মাখন বা সল্টেড মাখন ঘরের তাপমাত্রাতেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। কারণ, এতে লবণ থাকায় তা একধরনের প্রাকৃতিক সংরক্ষকের কাজ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *