সিরকা বা ভিনেগার আমরা সবাই চিনি এবং অল্পবিস্তর ব্যবহারও করে থাকি। মূলত রান্নায় ভিনেগার বেশি ব্যবহার হয়। এ ছাড়া খাবার সংরক্ষণেও ব্যবহার হয় এটি। এসবের বাইরেও রয়েছে সিরকার নানা রকম ব্যবহার ও উপকারীতা।
ভিনেগার অ্যাসিটিক অ্যাসিডের (CH3COOH) ৬-১০% ও পানির মিশ্রণে তৈরি। চিনি বা ইথানলকে গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে পরিণত করা হয়। এটি সাধারণতঃ রান্নাকর্মে ব্যবহৃত হয়। এটি মদ কিংবা আপেলের রস দিয়ে উৎপন্ন এলকোহল, ফলের রস ইত্যাদি জাতীয় তরল পদার্থ সহযোগে ভিনেগার তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। উক্ত তরলে ইথানল দ্রবীভূত হয়ে ভিনেগারে রূপান্তরিত করে। নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করেও এটি প্রস্তুত হয়। রান্নাকর্মে প্রায়শঃই আচার-চাটনী ও সালাদে এটি ব্যবহার করা হয়। ইতালীয় রান্নায় ভিনেগার, তৈল এবং লবণ আবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে বিবেচিত। গৃহস্থালী পরিস্কার, পুড়ে যাওয়া, চিকিৎসায় পথ্য ইত্যাদি বহুবিধ ক্ষেত্রে এর স্বার্থক প্রয়োগ ঘটেছে।
আমাদের দেশে সাধারণত সাদা ভিনেগার বেশি ব্যবহার করা হয়। আমরা সবাই কমবেশি ভিনেগারের উপকারিতা সম্পর্কে জানি। বেশি কিছু না জানলেও অন্তত এতোটুকু জানি যে, ভিনেগার খুব উপাকারী। এক টেবিল চামচ সাদা ভিনেগারে পেতে পারেন ০.৯ গ্রাম শর্করা, ০.৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.১ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম। এক টেবিল চামচ বলস্যামিক ভিনেগারে ৩.৭ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৩ গ্রাম শর্করা, ৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস এবং ১৭.৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম আছে। অপরদিকে এক টেবিল চামচ পরিমাণ অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে ১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১.২ মিলিগ্রাম ফসফরাস এবং ১০.৮ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম আছে, কোনো প্রকার চর্বি ও আমিষ এখানে নেই। এসব উপাদান আমাদের শরীরের কী উপকার করতে পারে জেনে নিন।
সালাদের সঙ্গে নিয়মিত ভিনেগার রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় এবং হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে।
কয়েকটি গবেষণায় এর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে শর্করা জাতীয় খাবারের সাথে ভিনেগার খেলে রক্তে শর্করার প্রবেশ কিছুটা ধীর হয়। ভিনেগার পরিপাকের কিছু এনজাইমকে রোধ করে যেসব এনজাইমের কাজ হলো শ্বেতসারকে শর্করার ক্ষুদ্র কণায় রূপান্তরিত করা। ২ টেবিল চামচ ভিনেগার আধা কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খেলে সকালে রক্তে শর্করা প্রায় ৪-৬ শতাংশ কমে।তাই যারা ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করলে উপকার পাবেন।
হজমে সহায়তা করে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়াসহ অন্ত্রের অন্যান্য রোগের চিকিৎসা দেয়। মাথা ধরলে এক টেবিল চামচ সিরকা আর কয়েক ফোঁটা মধু এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। দেখবেন, মাথা ধরা পালিয়েছে।
যারা ওজন সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা সালাদের সাথে মেয়োনেজের পরিবর্তে ভিনেগার দিয়ে খান। তাহলে মেয়োনেজের অতিরিক্ত ক্যালোরি ও ফ্যাট ছাড়াই আপনি সালাদকে সুস্বাদু করতে পারবেন। তাই ওজন কমাতে সালাদ, সবজি কিংবা অন্যান্য খাবারে ভিনেগার যোগ করুন।
মাঝে মাঝে হেঁচকির সমস্যায় ভুগতে পারেন। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কয়েক ফোঁটা সিরকাই যথেষ্ট।
সিরকার যেমন উপকারিতা আছে তেমনি অপকারিতাও আছে। চলুন জেনে নেওায়া যাক।
রাতে ঠিক ঘুমানোর আগেই ভিনেগান পান করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন করলে তা গলা ও ত্বকের ক্ষতির কারণ হয়। এটি সেবন করলে অনেকের রক্তের পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যায় যাকে হাইপোক্যালেমিয়া বলে এবং হাড়ের ঘনত্ব ও কমে যায়। অতিরিক্ত ভিনেগার গ্রহণের ফলে বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা, চুলকানি, মাড়িতে জ্বলুনি ও পেটেব্যথার মত সমস্যাগুলো হতে পারে।
ভাবছেন কীভাবে প্রতিদিন খাবারে সিরকা যোগ করা যায়? ব্যাপারটা খুব সহজ। টেবিলে সালাদ তৈরির সময় একটু সিরকা দিয়ে মাখিয়ে নিন। কখনো খাবার মেরিনেট করতেও সিরকা ব্যবহার করুন। এভাবেই আপনি নিজের শর্করা আরও ভালো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আবার আচার তৈরির সময় সিরকা ব্যবহার করলে অনেক দিন ভালো থাকে; তাতে পচন ধরে না। সিরকায় থাকা জৈব অ্যাসিড খাবারে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদানের রং নষ্ট হতে দেয় না। সিরকা খাবারে ব্যবহৃত মসলার তীব্রতা কমিয়ে দেয়। তীব্র ঝাল খাবারে খানিক সিরকা মিশিয়ে দিন। দেখবেন ঝালের তীব্রতা কমে যাবে।