ভালো চা পাতা চেনার উপায় এবং উপকারিতা
পানির পরেই চা বিশ্বের সর্বাধিক উপভোগ্য পানীয়। এর একধরনের স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক স্বাদ রয়েছে এবং অনেকেই এটি উপভোগ করে। চা বলতে সচরাচর সুগন্ধযুক্ত ও স্বাদবিশিষ্ট এক ধরনের উষ্ণ পানীয়কে বোঝায় যা চাপাতা পানিতে ফুটিয়ে বা গরম পানিতে ভিজিয়ে তৈরী করা হয়। চা গাছ থেকে এটি পাওয়া যায়। চা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। চা পাতা কার্যত চা গাছের পাতা, পর্ব ও মুকুলের একটি কৃষিজাত পণ্য যা বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করা হয়। সর্বোচ্চ চা রপ্তানিকারক দেশ হলো চীন।ইংরেজিতে চায়ের প্রতিশব্দ হলো টি (tea)। গ্রিকদেবী থিয়ার নামানুসারে এরূপ নামকরণ করা হয়েছিল। চীনে ‘টি’-এর উচ্চারণ ছিল ‘চি’। পরে হয়ে যায় ‘চা’।প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া অনুসারে চা-কে পাঁচটি প্রধান শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন – কালো চা, সবুজ চা, ইষ্টক চা, উলং বা ওলোং চা এবং প্যারাগুয়ে চা।এছাড়াও, সাদা চা, হলুদ চা, পুয়ের চা-সহ আরো বিভিন্ন ধরনের চা রয়েছে। তবে সর্বাধিক পরিচিত ও ব্যবহৃত চা হল সাদা, সবুজ, উলং এবং কাল চা।
১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। আর ভারতবর্ষে এর চাষ শুরু হয় ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা সিলেটে সর্বপ্রথম চায়ের গাছ খুঁজে পায়। এরপর ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিক চা-চাষ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে সমগ্র বিশ্বে ৩৮,০০,০০০ টন পাতা উৎপাদিত হয়েছে।
বাংলাদেশে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রচুর। এক চায়ের ভেতরেই রয়েছে নানা জাত, নানা দাম। চা এর রাজধানী শ্রীমঙ্গল থেকে সংগৃহীত বড় দানার এই চা-পাতা আপনাকে আসল চায়ের স্বাদ, গন্ধ ও লিকার নিশ্চিত করবে। শ্রীমঙ্গলের চা পাতার সুনাম সর্বত্র।
অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে যে বিভিন্ন ধরনের চা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং এমনকি ক্যান্সার ও হৃদরোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। এক কাপ চা ক্লান্তি যেমন দূর করবে তেমনি এর পাতা ব্যবহারে রয়েছে নানা দিক।কারণ ফোটানো পাতার গুণ সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা নেই। কিন্তু ব্যবহৃত এই চা পাতার রয়েছে নানা গুণ।
ক্ষত কমাতে: রান্নাঘরে কাটাকাটি করতে গিয়ে হাত কেটে গেছে? ক্ষত সারানোর জন্য অ্যান্টিসেপটিক কিছু খুঁজছেন? সেক্ষেত্রে অন্য কিছু না খুঁজে চায়ের পাতা ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষত সারাতে কাজে লাগে। এ জন্য চায়ের পাতাগুলো একটু ভালো করে সিদ্ধ করে নিন। তারপর কেটে যাওয়া জায়গায় লাগান। তাহলে দ্রুত ক্ষত সেরে যাবে।
গাছের সার: ফোটানো চায়ের পাতা গাছের সার হিসেবে বেশ উপকারী। সেক্ষেত্রে চায়ের পাতা রোদে শুকিয়ে তার পর গাছের গোড়ায় সার হিসেবে ব্যবহার করুন।
কন্ডিশনার হিসাবে: চা পাতা দুয়ে চুলের যত্নও করা যায়। এটি কন্ডশনারের কাজ করে। সব সময়ে দোকান থেকে কেনা কন্ডিশনার না মেখে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার দিয়েও চুলের যত্ন নিতে পারেন। এই রকমই একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হলো পাতা। এ জন্য ফোটানো চায়ের পাতা সিদ্ধ করে নিন। শ্যাম্পু করার পর সেই পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে চুল নরম হয়ে উঠবে।
জুতার দুর্গন্ধ তাড়াতে: অনেকেরই জুতা থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। এ সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে গ্রিনটিতে ভরসা রাখুন। গ্রিনটির পাতা জুতার ভেতরে এক দিন রাখলেই গন্ধ দূর হবে।
দীর্ঘদিন যাবত আমাদের গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সন্তুষ্টি প্রদান ও উপভোগ্য মুহূর্তের জন্য আমরা নিবেদিত আছি বিভিন্ন ব্র্যান্ড-এর চা নিয়ে; যা সতেজতা, চেনা ঘ্রাণ আর মনকাড়া স্বাদের জন্য সুপরিচিত। এদের মধ্যে আছে ইস্পাহানি, ফ্রেশ, তাজা, সিলন, পুষ্টি।
সাধারণত ক্রেতারা কোনটি ভালো মানের চা, সেটা হুট করে বুঝে উঠতে পারেন না। ফলে না বুঝেই যেকোন ধরনের চা কিনে ফেলেন এবং চা পান করে বুঝতে পারেন আসলে চা-টা ভালো হয়নি। চলুন তাহলে জেনে নিই ভালো চা পাতা চেনার উপায় কি?
প্রথমে একটি ফিল্টার পেপারে অল্প করে ছড়িয়ে দিন। এরপর ও পেপারের উপর অল্প পানি ছিটিয়ে দিন। এবার ফিল্টার পেপারটি ভালো করে ধুয়ে নিন। ভেজা কাগজটি এবার আলোর সামনে ধরে পেপারের দাগগুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুন। ভেজালহীন চা পাতা হলে ফিল্টার পেপারে কোনও দাগ দেখা যাবে না। আর, ভেজাল চা পাতা কাগজের উপর কালো বা বাদামী রঙের দাগ ফেলবে।
ভালো মানের চা পাতার মধ্যে মসৃণতা থাকে। হাতের তালুতে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে পাতা হালকা কিনা তাহলে সেটি ভালো মানের পাতা।
চায়ের একটি শক্তিশালী ও তাজা সুগন্ধ আছে যা এর নিজস্বতা যাচাই করতে সহায়তা করে। পাতার গন্ধ যদি বিবর্ণ গন্ধ থাকে তাহলে তা নিম্নমানের চা। তাছড়া ভালো মানের চা চেহারা দেখেই চেনা সম্ভব। ভালো মানের চা পাতায় দাগ বা ডালপালা থাকে না এবং চূর্ণবিচূড়ণ কম হয়। অনেক সময় চা পাতার মধ্যে কাঠের টুকরা থাকে যেটা ভেজাল এবং চা পাতাকে কম সুগন্ধযুক্ত করবে।
পরিশেষে বলা যায় বাঙালির সাথেও চায়ের সখ্যতা আজকের নয়, বহু পুরোনো। কাজের ব্যস্ততায়, গল্প-আড্ডায়, বাড়ি কিংবা অফিসে অতিথির স্মার্ট আপ্যায়ন হিসেবে চা চাই-ই চাই। এর কোনো বিকল্প নেই। চুমুকে চুমুকে যেন প্রশান্তি। তাই এই প্রশান্তিকে আরো বাড়িয়ে তুলতে নাম্বার ওয়ান চা পাতা কিনুন।