আমদানির ঘোষণাতেই পেঁয়াজের দাম কমছে হু হু করে
গত মাসে দেশি জাতের পেঁয়াজের দাম ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। তবে, বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়।
পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দিতেই বাংলাদেশের পাইকারি বাজারে পেয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ার কথা। রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, পেঁয়াজের কেজি ৪৫ টাকার বেশি হওয়া উচিত না। কিন্তু বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে কেজি প্রতি দাম ৪৫ টাকার নিচে চলে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।
কিন্তু আমদানিকৃত পেঁয়াজ বাজারে ঢোকার আগেই চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ভোগ্য পণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম এক রাতে ৩০ টাকা কমে গিয়েছে।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য মতে, রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৯০ টাকা বিক্রি হলেও সন্ধ্যা পর পরই দাম কেজি প্রতি ৮০ টাকায় নেমে আসে।
আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে ঢুকতে শুরু করলে দাম আরও ২০ টাকার মতো কমবে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম
ঢাকা, পাবনা ও চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, রোববারের ঘোষণার পর প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম কমেছে ২৫০-৩০০ টাকা।
রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা মোহাম্মদ মাজেদ জানান, শনিবার প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১৫০ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকায়।
তিনি দাবি করেন, কম দামের ভারতীয় পেঁয়াজ স্থানীয় বাজারে এলে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে।
পেঁয়াজের দামে এই ওঠানামা বাজার দরের কারণে নয় বরং সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে হচ্ছে বলে ধারণা ক্রেতা ও ভোক্তা অধিকার সংগঠকদের। ক্রেতাদের অভিযোগ বাজার মনিটরিংয়ের অভাবের কারণে দামে কোন নিয়ন্ত্রণ থাকছে না।
মিরপুরের বাসিন্দা জাহানারা বেগম জানান, “বাজারে একেকদিন পেয়াজের দাম একেক রকম। দুই মাসে আগেও ছিল ৬০ টাকা, এরপর হল ৭০ টাকা, তারপর ৮০, ৯০। আজকে ১০০ টাকায় কিনলাম। কোন পণ্যের দাম এভাবে বাড়তে পারে না। এটা পরিষ্কারভাবে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট। এ নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই। কারণ ভোগান্তি শুধু আমাদের।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর দুই লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করার পর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। কিন্তু, মজুত সুবিধার অভাবে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে, দেশে এখনো প্রায় ৬.৫০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে।