চালতার আচার কার না পছন্দ! ছোট-বড় প্রায় সব বয়সীদেরই টক-মিষ্টি চালতার আচার খুব প্রিয়। টক ফল চালতার আচার, চাটনি, টক ডাল অনেকেরই প্রিয় খাদ্য। পাকা ফল পিষে নিয়ে লবণ-মরিচ দিয়ে মাখালে তা বেশ লোভনীয় হয়। গ্রাম এলাকায় সাধারণত জঙ্গলে এ গাছ জন্মে। কখনো কখনো দুয়েকটি চালতা ফল এর গাছ বাড়ির উঠানে দেখা যায়। ইতিমধ্যে কাঁচা বাজার ছেয়ে গেছে এই লোভোনীয় টক ফল চালতার সমারোহে। শুধু খেতেই সুস্বাদু ও লোভনীয় নয়, এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা।
চালতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, বিটা ক্যারোটিন এবং সামান্য পরিমাণ প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট।চালতা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’-এর ভালো উৎস। তাই চালতা মানবদেহে যেমন রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে, তেমনি পুষ্টিগুণেও রাখে বিশেষ ভূমিকা
চালতা বা চালিতা বা চাইলতে বৈজ্ঞানিক নাম: Dillenia indica ইংরেজি নামঃ Elephant Apple. চালতা এক রকমের ভারতবর্ষীয় উদ্ভিদ। গাছটি দেখতে সুন্দর বলে শোভাবর্ধক তরু হিসাবেও কখনো কখনো উদ্যানে লাগানো হয়ে থাকে।
চালতা ফলের যে অংশ খাওয়া হয় তা আসলে ফুলের বৃতি। প্রকৃত ফল বৃতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে। ফল বাঁকানো নলের মত ; ভিতরে চটচটে আঠার মধ্যে বীজ প্রোথিত থাকে। চালতা অপ্রকৃত ফল; মাংসল বৃতিই ভক্ষণযোগ্য।
চালতার জন্ম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়।
এটি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশে জন্মে।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় এই ফল স্কার্ভি ও লিভারের রোগ-প্রতিরোধ করে। চালতায় রয়েছে বিশেষ ধরনের কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। চালতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ যা বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। চালতায় থাকা আয়রন রক্তের লোহিতকণিকার কার্যক্রমে সহায়তা করে। রক্তের সংবহন ঠিক রাখে। রক্তস্বল্পতা দূর করে। চালতার বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান হার্টের নানা রোগ-প্রতিরোধেও সহায়তা করে। চালতা পেটের নানা অসুখ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ডায়রিয়া সারাতে কাঁচা চালতার রস বেশ উপকারী। রক্ত আমাশয়ের জন্য চালতার কচি পাতার রস উপকারী। রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে চালতা। জ্ব্রর,গলা ব্যথা, বুকে কফ জমা, সর্দি, কাশি ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধেও চালতার আছে বিশেষ গুণ। তাই শীতকালে এসবের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে হলে চালতার রস কিংবা চালতার টক খেতে পারেন মাঝে মধ্যেই। কিডনির নানা রোগ-প্রতিরোধেও সহায়তা করে চালতা। চালতা হাড়, দাঁত ও নখ গঠনে সহযোগিতা করে। বাতের ব্যথায় কচি চালতার রস পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
সর্বোপরি চালতা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেহকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। তাই এই শীতে কিংবা সারা বছরেই চালতা খেতে পারেন আচার, চাটনি বানিয়ে অথবা চালতা-ডাল আহার করে।