পাঁচফোড়ন মশলা হিসেবে খাবারে ব্যবহার হয়ে থাকে। রসনাতৃপ্তির ক্ষেত্রে পাঁচফোড়ন ব্যবহার করা হয় স্বাদের জন্য। শুধু যে রান্নাতে স্বাদ বাড়াতেই পাঁচফোড়ন ব্যবহার করা হয় তা কিন্তু নয়। এই পাঁচফোড়নের একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। ঘ্রাণশক্তি এবং স্বাদ ফেরাতে ভীষণ ভাল কাজ করে এই পাঁচফোড়ন। এছাড়া গরমে পেট ঠান্ডা রাখতেও ভূমিকা রয়েছে পাঁচফোড়নের।
পাঁচ ফোড়ন দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় মসলার মিশ্রণ যা বাংলাদেশ, পূর্ব ভারত ও দক্ষিণ নেপালে বিশেষ কিছু রান্নায় যেমন, ডাল ও আচার বানাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পাঁচ ফোড়ন বা পাঁচ মসলাকে মৈথালী ভাষায় পাঞ্চ ফোরন, নেপালি ভাষায় পাদকুনে মশলা, অসমীয়া ভাষায় পাস ফুরন এবং উড়ীয়া ভাষায় পঞ্চু ফুতানা বলে ডাকে।
পাঁচ ফোড়নের উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে খনিজ লবণ । যেমন-পটাসিয়াম (K), সোডিয়াম(Na), ক্যালসিয়াম(Ca), ফসফরাস(P), জিংক(Zn), আয়রন(Fe), ম্যাগনেসিয়াম(Mg), ম্যাঙ্গানিজ(Mn), ও কপার(Cu)। এগুলিতে আরও রয়েছে – ভিটামিন এ, বি, বি-২, বি-৩, বি-৬, বি-৯, সি, ই এবং কে ।
মেথি– মেথির একাধিক স্বাস্থ্য উপরারিতা রয়েছে। এক চামচ মেথির মধ্যে ক্যালোরির পরিমাণ ৩৫। মেথি আমাদের হজমে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে শরীরে কার্বোহাইড্রেট আর সুগার শোষণ করে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে মেথির মধ্যে। নিয়মিত ভাবে মেথি খেলে শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। মেথির মধ্যেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কালোজিরে– কালোজিরে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, সেই সঙ্গে হৃদরোগের আশঙ্কাও কমে। ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং বাতের ব্যথা রুখতে কিন্তু উপকারী কালোজিরে।
মৌরি– রক্ত পরিশোধনের পাশাপাশি, মৌরি রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও মৌরি হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখে, স্ট্রেস কমায় এবং শারীরিক অস্বস্তি দূর করতেও সাহায্য করে। মহিলাদের জন্য মৌরি খাওয়া বিশেষভাবে উপকারী। বন্ধ্যাত্বের মত জটিল সমস্যা দূর করারও চাবিকাঠি রয়েছে মৌরির হাতে।
জিরে– হজম সমস্যা রুখতে ভীষণ ভাল কাজ করে জিরে। জিরে আমাদের মেটাবলিজম বাড়ায়। জিরের মধ্যে কোনও ক্যালোরি নেই। রোজ জিরে ভেজানো জল খেতে পারলে ওজন কমবে। লিভারের জন্যও কিন্তু উপকারী জিরে।
সরিষা– অ্যাজমা, ঠাণ্ডা লাগা ও বুকে জমাটবাঁধা কফ কমাতে, ওজন কমাতে, পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধে, বাতের ব্যথা দূর করতে, কোলেস্টেরল কমাতে, চুলের বৃদ্ধি ভালো করতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সরিষা উপকারি। সরিষা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
রাঁধুনি– রাঁধুনি ভেষজ গুণে ভরপুর। বহু বছর ধরে ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয় এই ভেষজ উপাদান। চোখের সমস্যা থেকে হজমের সমস্যা নানা ভাবে কাজ করে রাঁধুনি। ডাল বা শুক্তোতে ফোড়ন হিসেবে দিলেও খেতে ভাল লাগে।
ধনিয়া– দেহে ইনস্যুলিন উৎপাদনে সহায়তা করে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। ক্ষুধা বাড়ায়, হজমে সহায়তা ও মাথা ধরা উপশম হয়। মুখে ঘা, ডায়রিয়া, আমাশয়, ঠাণ্ডা, কফ, বসন্ত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।