গ্রাম বাংলার অতি পরিচিতি একটি ফল ডালিম। বাংলাদেশের সর্বত্রই প্রতিটি বসত বাড়ির আঙ্গিনায় ডালিম গাছ দেখা যায়। এ ফলকে কোনো কোনো অঞ্চলে বেদানা আবার কেউ আনারও বলে। এ ফলটি সারা বছরই পাওয়া যায়। এটি বাংলাদেশের মধ্যে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং রংপুর জেলায় ডালিম বেশি উৎপন্ন হয়। সব বয়সের সব মানুষের জন্য ডালিম খুবই উপকারী। গোলাকৃতির ফলটির বাকল ছাড়ালে ভিতরে লালচে রসে ভরা দানাগুলো খাওয়া হয়। ফল, গাছের পাতা, ছাল, মূল সবই ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য গুণাগুণেও ভরপুর ডালিম। ফলটি কৈাষ্ঠ্যকাঠিন্য, আমাশয়, পেটের অসুখ, শ্বাসকষ্ট, কাশি ও বাত ব্যাধিতে খুবই উপকার সাধন করে। ডালিমের রস মেধা ও রক্ত বৃদ্ধি করে এবং বুকের ব্যথা ও বুক ধড়ফড়ানি সেরে যায়। ডালিমের রস জন্ডিস রোগে বেশ কার্যকর। তাছাড়া মুখের অরুচি দূরে করে খাওয়ার রুচি বাড়ায়। কণ্ঠস্বর পরিষ্কার করে। হার্টের জন্য ডালিম খুবই উপকারী। ডালিমের ইংরেজি নাম পোমেগ্রেনেট।এফলটি দাঁত ও হাড়ের জন্য বেশ উপকারি। ভিটামিন সি থাকার ফলটি চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তাই চর্ম রোগ প্রতিরোধ ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তাছাড়া নানা ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে।
প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী ডালিমে খাদ্য উপাদান নিম্নরূপ :
খাদ্যশক্তি ৬৫ কিলোক্যালরি, শর্করা ১৪.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ১৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৭০ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ১.৬ মিলিগ্রাম, চর্বি ০.১ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.০৬ মিলিগ্রাম, বি-২ ০.১ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৩ মিলিগ্রাম।
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে ডালিমের রস হাজার বছর ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। কোষের জারণঘটিত চাপ কমানোর ক্ষেত্রে ডালিমের রস পথ্য হিসেবে পরিচিত। এছাড়া কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে থাকে। যারা হৃদরোগে বা হার্টের দুর্বলতায় ভোগছেন তারা ৩/৪ চামচ ডালিমের রসের সাথে ২ চা-চামচ ঘৃতকুমারী শাঁস মিশিয়ে খান খুবই উপকার পাবেন। তাছাড়া বিশেষ করে যাদের বংশগতভাবে হৃদযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মিত ডালিমের রসও খেয়ে থাকেন উপকারের জন্য।তাছাড়া যাদের রাতে ঘুম কম হয় তাদেরও উপকার আসবে।
নিয়মিত এই ফল খাওয়ার ফলে দূষণ বা সিগারেটের ধোঁয়ার মতো পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থ থেকে কোষকে রক্ষা করে থাকে। এছাড়া এই উপাদান জিনের ক্ষয় প্রতিরোধ ও মেরামতেও সহায়তা করে। এতে ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস পায়।চামড়ার ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ডালিম বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
যারা বহু দিন ধরে আমাশয়ে ভোগছেন তারা ডালিম গাছের ছাল ও ডালিমের খোসা লবঙ্গের (লং) এর সাথে ফুটিয়ে সেই পানি কয়েকদিন খান। খুবই উপকার পাবেন। তাছাড়া কৃমি মরে যাবে। বলবৃদ্ধি পাবে, পেটের অসুখের বিশেষ উপকার হবে।
যারা ডায়াবেটিসে ভোগছেন তারা ফলের খোসা থেঁতো করে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। কালো পানি বের হবে। সেই পানি ছেকে প্রতিদিন সকালে খান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসবে।
কিছু গবেষণা থেকে জানা গেছে, ডালিমের রসে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। মৃত্যুর মতো ভয়ানক ক্যানসার বিস্তারেও বাধা দিয়ে থাকে ডালিমের রস। এছাড়া মেডিকেল নিউজ টুডে’র প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে—আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ডালিমের রসে এমন উপাদান শনাক্ত করেছেন, যা প্রোস্টেট ক্যানসারের মেটাস্ট্যাসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
যাদের পেটে খাবার হজমে সমস্যা হয় তারা ৩-৪ চা-চামচ ডালিমের রস নিয়ে তাতে পুরাতন আখের গুড় মিশিয়ে দিনে ২ বার খান।
শিশুদের লিভার বড় হয়ে গেলে তাতে ডালিম গাছের মূলের শুকনা ছাল গুড়ো করে ২-৩ চা-চামচ নিয়ে তাতে ২ চামচ দুধ ও সামান্য মধু মিশিয়ে খাওয়ান। উপকার পাবেন।
জ্বর হলে ডালিমের রস চিবিয়ে খান শরীরের তাপ কমে আসবে। কাশি থাকলে কফ ও পেটের বায়ু নাশ হবে।
বমি বমি ভাব থাকলে ডালিমের রস ও মধু মিশিয়ে খান উপকার পাবেন।
যাদের নাক দিয়ে পানি পড়ে তারা ডালিমের রসের সাথে দুর্বাঘাসের রস মিশিয়ে খান, উপকার পাবেন।
বেশি পরিমাণে শিকড়ের রস খেলে বিষক্রিয়া হতে পারে। সতর্ক থাকতে হবে যে, সব ফল বা উপাদান সবার ক্ষেত্রে উপকারী নাও হতে পারে। এ জন্য যেকোনো উপকারী ফল পথ্য হিসেবে নিয়মিত খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
এই উপকারী গাছটি বাড়ির আশে-পাশে লাগান যত্ন নিন। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসুন।