জেনে নিন বিট লবণ এর উপকারিতা অপকারিতা
বিট লবণ যাকে বলা হয়ে থাকে ‘রক সল্ট’ কিংবা ব্ল্যাক সল্ট Black salt. যার আরেকটি নাম সুলেমানী লবণ। সাধারণত বিট লবণ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এর নিকটবর্তী হিমালয়ের আশপাশের লবণসমৃদ্ধ মাটির নিচ থেকে পাথর আকারে উত্তোলন করা হয়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত ও নেপালে এই লবনের খনি আছে।
সাধারণ লবনের মত এটাতেও সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকে যা টক ভাব আনতে সাহায্য করে তবে, এর সাথে আরো যুক্ত হয় আয়রন সালফাইড যা এর ধুসর রং আনতে সাহায্য করে আরেকটা হলো হাইড্রোজেন সালফাইড(পচা ডিমের মত গন্ধ) ,যা এর কটু গন্ধ আনার ক্ষেত্রে দায়ী। তাছাড়া এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, ফেরিক অক্সাইড, ফেরাস সালফেট ও ফ্লুরাইড ইত্যাদি।
সাধারণ লবণের তুলনায় বিট লবণ খুব কম ব্যবহার হয়ে থাকে। আমাদের দেশে মসলা হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া এটি চটপটি,রাইতা ও সালাদেও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই লবণ খাওয়ার যে অনেক উপকারিতা তা হয়তো অনেকের অজানা রয়েছে। এই লবণ খেলে কমবে অ্যাসিডিটি সমস্যা। এমনকি বমি বমি সমস্যা সহ অন্য সমস্যাও দূর করবে এই বিট লবণ। বিট লবণে থাকা খনিজগুলো অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে আমাদের শরীরে। যা কিনা শরীরের খারাপ সকল ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। লবণে থাকা সোডিয়াম শরীরকে সতেজ রাখতে সহায়তা করে। যারা ওজন কমাতে চান তারা চাইলে বিট লবণ খেতে পারেন।যাদের সুগারের সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত খেতে পারেন। রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য করে বিট লবণ।কোলেস্টেরল, পেট খারাপ ইত্যাদি সহ পেটের নানান সমস্যা দূর করে। রাতে ভালো ঘুম না হলে অথবা ইনসমনিয়ার সমস্যা থাকলে নিয়মিত লবণ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমের সমস্যা মূলত দেখা দেয় শরীরে মেলাটোনিনের মাত্রার তারতম্য দেখা দিলা। এই মেলাটোনিনের মাত্রাকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে। শরীরের হাড়ও মজবুত করতে সাহায্য করে। সাদা লবণ যেখানে রক্তচাপ বৃদ্ধির জন্য দায়ী, সেখানে বিট লবণ উচ্চরক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে। এমনকি রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে সাদা লবণের পরিবর্তে খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। কর্মব্যস্ত সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে এক গ্লাস পানি লবণ ও এক টুকরো লেবু মিশিয়ে পান করুন। দেখবেন মুহূর্তেই চাঙ্গা বোধ করছেন। প্রতিদিন সকালে হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে শরীর থাকবে সুস্থ।
অনেকের ধারণা, সাধারণ লবণের চেয়ে বিট লবণে সোডিয়াম কম থাকে বলে তা হয়তো উচ্চরক্তচাপ কমায় ও শরীরের পক্ষে ততটা ক্ষতিকর নয়।
ভারতের দিল্লির ফ্লুরোসিস গবেষণা ও পল্লী উন্নয়ন ফাইন্ডেশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে লবণ খাওয়ায় ভারতে ফ্লুরাইড বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় ৬৬ মিলিয়নেরও বেশি।
এই গবেষণার পর প্রতিষ্ঠানটি বিট লবণ ও বিট লবণ দিয়ে তৈরি স্ন্যাকস বা আয়ুর্বেদিক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতি মিলিয়নে রয়েছে আড়াইশ শতাংশ পরিমাণ ফ্লুরাইড। এটি পটাশিয়াম বা সোডিয়াম যেকোনো ফ্লুরাইড হতে পারে। যা প্রচুর টক্সিন সমৃদ্ধ। ৪.৯ গ্রাম অর্থাৎ, প্রতি চা চামচ বিট লবণে রয়েছে ০.৫৬ গ্রাম ফ্লুরাইড। ফ্লুরাইড থাইরয়েড গ্রন্থি, হাড়, জয়েন্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। শরীরে ফ্লুরাইডের অতিরিক্ত মাত্রা ফ্লুরোসিস নামের রোগ তৈরি করে। ফলে ওজন হ্রাস পায়, ত্বকে প্রদাহ দেখা দেয়, দাঁতের ক্ষতি হয় ও চুল পড়া থেকে শুরু করে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও এটি রক্তস্বল্পতা, রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি ও পাকস্থলির ঝিল্লির ক্ষতি করতে পারে।
ফ্লুরাইড আসলে কি? এটা একটি প্রয়োজনীয় উপাদান যা দাঁত ও হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। মানবদেহে ফ্লুরাইডের সহনীয় মাত্রা ২ থেকে ৩ মিলিগ্রাম। কিন্তু তা যদি ৪ মিলিগ্রামের ওপরে চলে যায় তাহলে তা বিষে পরিণত হয়। খাবার পানিতেও ফ্লুরাইড রয়েছে। এক লিটার পানিতে ০.৫ থেকে ১.০ মিলিগ্রাম ফ্লুরাইড থাকে। এর বেশি মাত্রায় থাকলে তা দূষণ পর্যায়ে চলে যায়। এটি এমন একটি উপাদান যা সীসা, পারদ ও রেডন গ্যাসের (radon gas) মতোই বিষাক্ত।