Business Talk

জেনে নিন টক দই এর কি গুণ এবং কিভাবে খাবেন!!!

বহুল পরিচিত একটি খাবার যা যুগ যুগ ধরে মানুষের নিত্যজীবনের অংশ হয়ে আছে সেটা হল দই। প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর ধরে মানুষ দই কে একটি ডেজার্ট হিসেবে গ্রহণ করে আসছে। পুষ্টিকর খাবার হিসেবে এর জুড়ি নেই। পৃথিবীর সব জায়গাতেই কম এবং বেশি এই দই খাওয়ার চল রয়েছে। রোজকার পাতে দই থাকে অনেকেরই। এই দই ঘরে বানিয়ে নিত্যদিন সেবন করা যায়। দুই প্রকারের দই পাওয়া যায় যেমন টক দই এবং মিষ্টি দই। মিষ্টি দই এর চেয়ে টক দই এর উপকারিতা অনেকটা বেশি। অনেকেই দুধ খেতে পছন্দ করেন না। তাঁরা বিকল্প হিসাবে দই খান। টক দইয়ে রয়েছে প্রো-বায়োটিক উপাদান, উপকারী ব্যাক্টেরিয়া। যেগুলি শরীরের ক্ষতিকার ব্যাক্টেরিয়াকে মেরে ফেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। টক দই শরীরে ক্ষতিকর বর্জ্য জমতে দেয় না। টক দই শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি হজম শক্তিও উন্নত করে। টক দই খেলে বাড়তি ওজন কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে। টকদই এ রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, প্রয়োজনীয় ফ্যাট, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-বি১২ সহ প্রয়োজনীয় নানা পুষ্টিকর উপাদান।

এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং সময় আছে। টকদই খাওয়ার উপযুক্ত একটি সময় হলো দুপুর বা সকালে খাওয়ার পর। প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন ২০০-২৫০ গ্রাম টকদই খেতে পারেন। অপ্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে খেতে পারে। টকদই এ চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু মিশিয়ে খাবেন না প্রয়োজনে একটু বিট লবণ ব্যবহার করতে পারেন।প্রতি দিন দই না খাওয়াই ভাল। এক দিন অন্তর এক দিন টক দই খাওয়াই ভাল। তবে রোজ দই খাওয়ার অভ্যাস থাকলে শুধু দই না খেয়ে দইয়ের সঙ্গে কখনও মিশিয়ে নিতে পারেন আখরোট, কাজু বা কিশমিশ। কখনও বা কলা, আঙুর, বেদানার মতো স্বাস্থ্যকর কিছু ফল।

আমাদের শরীরে বিদ্যমান খারাপ ব্যাকটেরিয়া কে প্রতিরোধ করতে সক্ষম টকদই এ থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া সমূহ। এর ফলে শরীরে হঠাৎ কোনো খারাপ ব্যাকটেরিয়া এট্যাক করতে পারেনা। অর্থাৎ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যা বিভিন্ন ছোট খাটো রোগ মোকাবেলায় সাহায্য করে। এর পাশাপাশি টকদই শ্বেতরক্তকণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় যা জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে  টক দইয়ে থাকা প্রোবায়োটিক, অন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এমনকি খাদ্যনালীতে কোষ উৎপাদনের বড় ভূমিকা পালন করে এই প্রোবায়োটিকস।

টকদই হজমে সাহায্য করে। টকদই এ থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়া হজম শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। তাই বলা হয় দুপুরে খাওয়ার পর দই খেলে তা হজম প্রক্রিয়া কে ত্বরান্বিত করে।

এতে ফ্যাট না থাকায় টক দই আমাদের খারাপ কোলেস্টেরল কে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ভাল কোলেস্টেরল উৎপাদনে সাহায্য করে।

আমরা জানি, দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। কিন্তু টকদই এ দুধের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি থাকে যা আপনার হাড়ের গঠন এবং হাড় মজবুত করতে অনেক সহায়তা করে। তাই মহিলাদের নিয়ম করে টক দই খাওয়া উচিৎ। কারণ মহিলারাই সবচেয়ে বেশি হাড় জনিত নানা সমস্যায় ভুগেন।

দেহের অতিরিক্ত ওজন আমাদের অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অতিরিক্ত ওজনের জন্য আমাদের শরীরে নানা রোগের উৎপত্তি হয়। কিন্তু এটি খেলে আপনি খুব সহজেই বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। টক দই শরীরের ফ্যাট বার্ন করে বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও টক দইয়ের নিজেই হজম হতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। তাই ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার না খেয়ে টক দই খেলে অধিক সময় পর্যন্ত পেট ভরে থাকে এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে আপনাকে বিরত রাখবে।

যেহেতু টক দই পাকস্থলীর নানা রোগ হবার সম্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে হজম শক্তিকে বাড়িয়ে দেয়, তাই টকদই নিয়মিত গ্রহণ করলে আলসার হবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। তাই দুপুরে খাওয়ার পর টকদই খাওয়া একটা ভালো অভ্যাস। ল্যাকটোজ এর সংবেদনশীলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অন্ত্রের নানা সমস্যা দূর করতে টকদই বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

টকদই শরীরে টক্সিন জমতে দেয় না ও অন্ত্রনালী পরিষ্কার রেখে শরীর সুস্থ রাখে এবং অকাল বার্ধক্য রোধ করে। শরীরে টক্সিন কমার কারণে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় এবং তারুণ্য বজায় থাকে। তাই নিজেদের ফিট এবং সুন্দর রাখতে আমাদের নিয়মিত টক দই খাওয়া উচিৎ।

উচ্চরক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার একটি মারাত্মক সমস্যা। বেশিরভাগ মানুষকে এই রোগে আক্রান্ত হলে নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হয়। নিয়মিত এক কাপ করে খেলে এক-তৃতীয়াংশ রক্তচাপ কমে যায়। তাই এই রোগে আক্রান্ত হতে না চাইলে নিয়মিত খাওয়া উচিৎ।

বাচ্চাদের পাচক তন্ত্র অনেক দূর্বল হয়ে থাকে বড়দের তুলনায়। তারা সহজেই সব খাবার হজম করতে পারেনা। কিন্তু বাচ্চারা টকদই হজম করতে পারে। যা তাদের পাকস্থলি অনেকটা ঠান্ডা রাখে। এর পাশাপাশি টকদই এ থাকা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-ডি বাচ্চাদের নরম হাড় মজবুত করতে দারুণ ভূমিকা পালন করে।

আমরা জানি আমাদের পাচকতন্ত্রের সাথে আমাদের মুখমণ্ডল এর ত্বকের উজ্জ্বলতার একটি সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের খাবার যদি সহজে হজম না হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে তাহলে আমাদের ত্বকেও এর প্রভাব পড়ে। ত্বকে ব্রণ দেখা দেয়, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়। তাই নিয়মিত টকদই খেলে তা আপনার পেট পরিষ্কার করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে। এতে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে। এর পাশাপাশি টকদই নানা ফেইস প্যাক বানাতে ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ও ত্বকের জন্য অনেক ভালো কাজ করে থাকে।

যেকোনো কিছুই প্রয়োজন এর বেশি সেবন করলে শরীরে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। টকদই এর ক্ষেত্রে ও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রতিদিন ২০০-২৫০ গ্রাম টক দই খেতে হয়। এর বেশি টক দই খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায় যা অন্যান্য অনেক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া টকদই শরীরে তেমন কোনো জটিলতা সৃষ্টি না করে থাকলেও কারো যদি দুধ বা দুধ জাতীয় খাবারে এলার্জি থাকে তারা টকদই খাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। আর খেতে হলে অবশ্যই ডাক্তার এর পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

আপনি যদি প্রতিদিন টকদই খেয়ে থাকেন তাহলে সেটি অবশ্যই সকালে বা দুপুরে খাবারের পর গ্রহণ করুন। রাতে বা খালি পেটে টকদই খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *