সারাদিনের ব্যস্ততায় পথ চলতে শরীরে ঘামের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পানি বেরিয়ে যায়। এতে শরীর নিস্তেজ হয়ে আসে। এমন পরিস্থিতিতে স্বস্তি এনে দিতে পারে ডাবের পানি। ডাবের পানি হল প্রাকৃতিক স্যালাইন। যারা সমুদ্র উপকূলে বা রোদে কাজ করেন তারা দিনে দুই-তিনটি ডাব খেতে পারেন। ডাবের পানিতে উপকারী উৎসেচক (এনজাইম) থাকায় তা হজমে অত্যন্ত সাহায্য করে। অনেকের জন্যই ভারি কিছু খাওয়ার পর এ পানি বেশ উপকারী। রাস্তাঘাটে বের হতে হলে সাথে রাখুন খাবার পানি। কাজের মাঝে মাঝে ডাবের পানি পান করলে ভালো ফল পাবেন।
বিভিন্ন খনিজ পদার্থে পূর্ণ ডাব ক্লান্ত শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে এবং সতেজ রাখে। এক কাপ (২৪০ মিলি) ডাবে আছে ৬০ ক্যালরি, ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৮ গ্রাম চিনি। এছাড়া দৈনিক চাহিদার ৪% ক্যালসিয়াম, ৪% ম্যাগনেসিয়াম, ২% ফসফরাস এবং ১৫% পটাশিয়ামও পাওয়া যায়।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে ডাবের পানি অনেক বেশি কার্যকরী। এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি যা ব্লাড প্রেসারকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়াএই পানিতে থাকা পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতির কারণে শরীরে ইলেকট্রোলাইটে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। ডাবে যে প্রাকৃতিক শর্করা ও মিনারেল রয়েছে তা শরীরকে শীতল ও আর্দ্র রাখে। এজন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যোদ্ধাদের স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে ডাবের পানি দেওয়া হতো। এর ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও ফাইবার কর্মশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর অনেক কিছু প্রয়োজন হয় তাঁর নিজের ও সন্তানের জন্য। সে সময় ডাবের পানি সবকিছুর জন্য কাজ না করলেও কিছু কিছু বিষয়ে বেশ উপকারে দেবে। এটি হজমে বেশ সাহায্য করে। নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে। ডাবের পানি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ইউরিনারি ট্র্যাক্টে সংক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করে। ডায়বিটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী জল। নিয়মিত এ জল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি ত্বকে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখে। অ্যামিনো অ্যাসিড ও শর্করা থাকে বলে এটি শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি জোগায় ও আর্দ্রতা বজায় রাখে।
প্রতিটি জিনিসের ভালো ও মন্দ দুটি দিকই থাকে। এর কিছু অপকারিতার কথা জেনে নেওয়া যাক। এ পানির উপকারিতা বলে শেষ করা যায় না। তবে ডাবের পানিতে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। ফলে কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন,এতে থাকা পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম উপাদান শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু শরীরে এগুলোর কোনোটার পরিমাণ বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট, ডায়াবেটিস ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় নাও থাকতে পারে। ঠান্ডা ও সর্দির রোগী, অ্যালার্জির রোগীদেরও ডাবের পানি পানে সতর্ক থাকতে হবে।
তবে যেকোনো খাবার নিয়মিত খাওয়ার আগে আপনার শরীরের অবস্থা বুঝতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।