কেন অতিরিক্ত রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন ?
রসুন আমাদের দৈনন্দিন খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তরকারি সুস্বাদু করার জন্য পেঁয়াজ, মরিচ এর সাথে রসুন ও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু খাবারের সময় যখন প্লেটে দেখি আমরা তা ফেলে দেই। অনেকেই তার গন্ধের কারণে ফেলে দিলে ও বেশিরভাগ মানুষ ফেলে দেওয়ার মূল কারণ হল রসুনের গুনাগুন সম্পর্কে না জানা। নিয়মিত খেলে চোখ ভালো থাকে এমনকি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম রসুন। এতে রয়েছে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা পাশাপাশি কিছু অপকারিতা ও রয়েছে । তাই আজকে আমর এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
এর বৈজ্ঞানিক নাম অ্যালিয়াম স্যাটিভাম (Allium sativum). বিভিন্ন আচার ভর্তা ও মুখরোচক খাবার তৈরীতে রসুন ব্যবহার করা হয়। এটি হল পিঁয়াজ জাতীয় একটি ঝাঁঝালো সবজি যা রান্নার মশলা ও ভেষজ ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। রসুন গাছ একটি সপুষ্পক একবীজপত্রী লিলি শ্রেণীর বহুবর্ষজীবী গুল্ম। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রসুন উৎপাদনকারী জেলা নাটোর। নাটোর জেলা বাংলাদেশের রসুনের চাহিদার শতকরা ৩০ ভাগ এবং একক জেলা হিসেবে শতকরা ৭০ ভাগ উৎপাদনকারী জেলা।
রসুনে রয়েছে থিয়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও সেলেনিয়াম।
বিশেষজ্ঞদের মতে রসুনের একাধিক গুণ রয়েছে। নিয়ম করে খেলে শরীরের বহু রোগ হবে নিরাময়। এক কোয়া মানব শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। নিয়মিত যদি খালি পেটে খাওয়া যায়, তাহলে তা বেশি কার্যকরী হয়।
এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ রয়েছে যা ঔষধের মতনই কাজ করে। যার ফলে অনেকটাই রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। প্রতিনিয়ত খালি পেটে রসুন খেলে এর উপকার অনেক বেশি।
হার্টের সমস্যা সমাধানে এটি খুবই উপকারী উপাদান। রসুনের মধ্যে অ্যালিসিনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে প্রতিদিন খালি পেটে রসুন খেলে কলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়। ব্লাড প্রেসার, রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুবই উপকারী।
খালি পেটে খেলে পরে রক্ত পরিশোধন ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং রক্ত চলাচলে স্বাভাবিক গতি ফিরে আসে। যার ফলে শরীর থাকে সুস্থ।
এতে উপস্থিত অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ‘সেল ড্যামেজ’ ও ‘এজিং’ রোধ করে। ব্রেনের সেল ড্যামেজ কম হয়ে আলঝেইমারস ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
তবে সবার ক্ষেত্রে কিন্তু রসুন উপকারী নয়। কারো কারো জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন- খালি পেটে খেলে অনেকের ডায়রিয়া হতে পারে। আবার গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক এর বিভিন্ন অপকারিতা সম্পর্কে।
গবেষণা বলছে, এতে থাকা অ্যালিসিন নামক উপাদান লিভারে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। তাই অতিরিক্ত রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
রসুনে রয়েছে সালফার, যা পেটে গ্যাস তৈরি করে। তাই খালি পেটে খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
রক্তের ঘনত্ব কমায়। তাই যারা ওয়ারফারিন, অ্যাসপিরিন ইত্যাদি ওষুধ সেবন করেন; তাদের অতিরিক্ত রসুন খাওয়া উচিত নয়। এতে রক্ত অতিরিক্ত পাতলা হতে পারে।
রক্তচাপ কমে যেতে পারে অতিরিক্ত রসুন খেলে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন রসুন খেলে ঘাম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গর্ভবতী নারী রসুন খেলে প্রসব বেদনা বেড়ে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এ ছাড়াও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরাও খাবেন না। এতে দুধের স্বাদ পাল্টে যেতে পারে।
অতিরিক্ত খেলে হাইফিমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে আইরিস ও কর্নিয়ার মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটে দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি বাড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, খালি পেটে কাঁচা রসুন খেলে বুক জ্বালাপোড়া, বমিভাব ও বমি হতে পারে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে এমন কিছু উপাদান আছে, যা জিইআরডি বা গ্যাস্ট্রোয়েসোফাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ হওয়ার কারণ।