Business Talk

কেনো খাবেন ক্যাপসিকাম

বর্তমানে আমাদের দেশে  বেশ জনপ্রিয় একটি খাদ্য উপাদানে পরিণত হয়েছে ক্যাপসিকাম। দেশীয় সবজি না হলেও এর চাষ ধীরে ধীরে বাড়ছে এই দেশে।স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবেও এর তুলনা নেই।

ক্যাপসিকামের বৈজ্ঞানিক নাম Capsicum annuum.সাধারণ ভাবে এর ২০ থেকে ২৭টি প্রজাতি আছে। তবে এদের মধ্যে ৫টি প্রজাতিই মোটামুটি ভাবে পরিচিত। অ্যানাম,  ব্যাককাটাম, চাইনেনস, ফ্রুটিসেনস ও পিউবিসেনস।পাঁচটি প্রজাতির মধ্যে  ক্যাপসিকাম অ্যানাম  প্রজাতিটি সবচেয়ে সাধারণ এবং ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়।ক্যাপসিকাম অ্যানাম হল দক্ষিণ উত্তর আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান এবং উত্তর দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয় গোত্রের উদ্ভিদের একটি প্রজাতি।  জায়গা এবং ধরনের ওপরে নির্ভর করে লঙ্কা গাছের নানা ধরনের নাম হতে পারে। মশলায় ব্যবহৃত মরিচ শুধু লঙ্কা বা শুকনো লঙ্কা হিসেবে পরিচিত। বড় আকারের এবং কম ঝাঁঝালো প্রজাতির লঙ্কাকে উত্তর আমেরিকায় রেড পেপার, গ্রিন পেপার অথবা বেল পেপার বলা হয়। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে এরাই ক্যাপসিকাম নামে পরিচিত।

লঙ্কার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ক্ষারজাতীয় ক্যাপসাইসিন। লঙ্কাতে যে তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যায় তার অন্যতম কারণ এই  যৌগ। তেল জাতীয় পদার্থে দ্রবীভূত বা লাইপোফিলিক রাসায়নিক যৌগটি যাঁরা লঙ্কায় অভ্যস্ত নন তাঁদের জিভে তীব্র জ্বলুনির অনুভুতি সৃষ্টি করে। অধিকাংশ স্তন্যপায়ীদের কাছে অস্বস্তিকর।   ক্যাপসাইসিন-এর রাসায়নিক নাম মিথাইল ভ্যানিলাইল ননএনামাইড।

ক্যাপসিকামের পুষ্টি উপাদান

১০০ গ্রামের একটি ক্যাপসিকামে রয়েছে ৮৬০ মিলিগ্রাম প্রোটিন, ৪ দশমিক ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ দশমিক ৭০ মিলিগ্রাম চর্বি, ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ৩৭০ আইইউ ভিটামিন-এ।সামান্য পরিমাণ ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি৬, থায়ামিন, লেবোফ্লেবিস ও ফলিক এসিড পাওয়া যায়।

খনিজ উপাদানের মধ্যে ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, আয়রন ৩৮০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৭৫ মিলিগ্রাম ও ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়।তাছাড়া জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও ফ্লোরাইড সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায়।

ক্যাপসিকামের উপকারিতা

১. ক্যাপসিকামে ভিটামিন সি এবং কে থাকে। যা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

২. উচ্চ পরিমাণ ভিটামিন-এ থাকার কারণে এটি চোখের জন্য খুব উপকারী। বিশেষ করে নাইট ভিশনের জন্য৷এটি খেলে দৃষ্টি কমে যাওয়ার সমস্যায় কম ভুগবেন।

৩. ক্যাপসিকামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহদূরকারী উপাদানগুলি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো অ্যান্টি-ক্যানসার এজেন্ট। এতে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করে।

৪. চামড়া পরিষ্কার রাখতে ক্যাপসিকাম বেশ উপকারী, এটি চামড়ার র‍্যাশ হওয়া ও ব্রণ প্রতিরোধ করে।

৫. ক্যাপসিকাম হজম শক্তি উন্নত করার ক্ষমতা দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক। এটি দেহের বাড়তি ক্যালরি পূরণে কাজ করে।

৬. ক্যাপসিকামের গুণে হার্ট সুস্থ থাকে। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষভাবে সহায়ক ক্যাপসিকাম।

৭. এই সবজিটি ডায়াবেটিস নিয়িন্ত্রণ করতেও কার্যকর এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থির রাখে।

৮. মাইগ্রেন, সাইনাস, ইনফেকশন, দাঁতে ব্যথা,মেরুদণ্ডে ব্যথা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ইত্যাদি ব্যথা দূর করতে নিয়মিত ক্যাপসিকাম খান। উপকার পাবেন। 

কোনও খাবার বা সবজির পুষ্টিগুন যেমন থাকে, তেমনি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকে। ফলে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অনেকের বিভিন্ন রকম খাবার অ্যালার্জির সমস্যা থাকতে পারে। তাই কোনও খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকদের  পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর একটা কথা না বললেই নয় তা হল অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ক্যাপসিকাম রান্না করলে এই উপাদান অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। বরং কাঁচা অবস্থায় সালাদে খেলেই এর পুষ্টিগুণ পুরোপুরি পাওয়া যায়। স্টার-ফ্রাই মেথডে এটি রান্না করে খেতে পারেন। উচ্চ তাপমাত্রায় বেশিক্ষণ রান্না না করাই ভালো। সুস্থ থাকতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ক্যাপসিকাম রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *