কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। গ্রীষ্মকালীন এই ফল দেখতে আকৃতিতে বড়, রসালো কোষ ও চমৎকার। স্বাদ-গন্ধের জন্য ফলটি খুবই জনপ্রিয়। কাঁঠালের ত্বক কাঁটা কাঁটা এবং অমসৃণ। কাঁঠালের অনেকগুলো ফুল মিলিত হয়ে একটি ফুলের সৃষ্টি করে যাকে বলা হয় ক্যাটকিন তাই কাঁঠাল একটি যৌগিক ফল। বিভিন্ন ফলের মধ্যে কাঁঠাল সবচেয়ে বড় ফল।ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রণ, জিংক, সালফার, ক্লোরিন, কপার, ফাইবার, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাংগানিজ,ভিটামিন-এ, বি,সি আছে কাঠাঁলে। যা মানব দেহের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিরাট ভূমিকা পালন করে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী পাঁকা কাঁঠালে পুষ্টি উপাদান হলো: জলীয় অংশ ৮৮ গ্রাম, শর্করা ২৪ গ্রাম, আঁশ ২ গ্রাম, চর্বি ০৩ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮ গ্রাম, ভিটামিন ২৯৭ আইইউ, ভিটামিন সি ২১ মিলিগ্রাম, খনিজ লবণ ১.১ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ৪৮ কিলোক্যালরি, লৌহ ০.৬ গ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.১১মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.১৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম ৪১.১ মিলিগ্রাম, কপার ০.২৩ মিলিগ্রাম, সালফার ৬৯ মিলিগ্রাম এবং ক্লোরিন ৯ মিলিগ্রাম, তবে মনে রাখবেন কাঁঠালের জাত উৎপাদনের স্থান ও জলবায়ু ইত্যাদি পরিবর্তনের কারণে পুষ্টিগত মান কম বেশি হতে পারে।
কাঁঠাল বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এটি ত্বকের জন্য ভালো। কাঠাঁলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ সৃষ্টিকারী মুক্ত উপাদানের (ফ্রি র্যাডিক্যালস) বিরুদ্ধে লড়াই করে। প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকায় হাড়ের ক্ষয় রোধ করে
কাঁঠালে থাকা ভিটামিন এ-র কল্যাণে মাথার চুল ভালো থাকে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ে ও চোখের সমস্যা কমে। এতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, অ্যাজমা, কাশি, সর্দি ও ক্যানসারের মতো রোগ দূর করে।
কাঁঠালে প্রায় কোনো কোলস্টেরল নাই বললেই চলে। তাই কাঁঠাল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ। যেকোনো বয়সের মানুষ এটা খেতে পারেন। এটি শক্তির ভালো উৎস।
পেটের নানা রকম পীড়া থেকে মুক্তি দিতে পারে কাঁঠাল। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং অন্ত্রের নড়াচড়া বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া কাঁঠালের বিঁচি পুড়িয়ে বা তরকারি করে খেতে পারেন যদি পেটের কোন সমস্যা হয় বা পাতলা পায়খানা হয় । কাঠাঁলে থাকা আঁশ কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে।কাঁঠালের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মধ্যে রয়েছে বিটা ক্যারটিন, লুটেইন যা প্রোস্টেট, স্তন, পাকস্থলি ফুসফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
কাঠাঁলে চর্বির পরিমাণ খুব কম। তাই বেশি খেলেও ওজন বাড়ার শঙ্কা নেই। বরং পেট ভরে রেখে ওজন কমাতে সাহায্য করে কাঁঠাল।
গর্ভবতী মা প্রতিদিন ২০০ গ্রাম পাকা কাঁঠাল খেলে গর্ভস্থ শিশুর সব ধরনের পুষ্টির অভাব দূর হয় এবং গর্ভস্থ সন্তানের বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবে হয়। এই কাঁঠালের সব থেকে বড় গুণ হচ্ছে এটি মায়ের দুধের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।
কাঁঠাল পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে পটাশিয়ামের পরিমাণ ৩০৩ মিলিগ্রাম। এই পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ জন্য কাঁঠাল উচ্চ রক্তচাপে উপশম করে। কাঁঠালের গন্ধ মজা পেয়ে এক সাথে বেশী খাবেন না, বদ হজম হতে পারে। কেউ কাঠাল খেলে যদি গ্যাসট্রিকে সমস্যা হয় তাহলে অল্প পরিমাণ করে ভাতের সাথে খান। ডায়াবেটিস রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কাঁঠাল খাবেন। যারা কিডনী রোগে আক্রান্ত তারা কাঁঠাল খাবেন না। আর যাদের মূত্রতলীতে পাথর আছে বা কিডনীতে পাথর আছে তারাও কাঁঠাল খাবেন না।