কফি নিয়ে কিছু অজানা তথ্য
দিনের কাজ শুরু করার আগেই নাশতার টেবিলে, দুপুরে লাঞ্চের পর অথবা অলস বিকালে অনেকটা অভ্যাসবশতই কফি পান করার অভ্যাস আমাদের অনেকের মধ্যেই রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালে সারা বিশ্বে ৬০ কেজি ওজনের কফির ব্যাগ বিক্রি হয়েছিল ৯ কোটি।
বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় পানীয়। পানির সাথে ফুটিয়ে “কফি বীজ” নামে পরিচিত এক প্রকার বীজ পুড়িয়ে গুঁড়ো মিশিয়ে এটি তৈরি করা হয়। এই বীজ কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ। প্রায় ৭০টি দেশে এই ফলের গাছ জন্মে। এতে ক্যাফেইন নামক এক প্রকার উত্তেজক পদার্থ রয়েছে। ৮ আউন্সে প্রায় ১৩৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে।এর উপাদান ক্যাফেইনের জন্যে এটি মানুষের উপর উত্তেজক প্রভাব ফেলে ও উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত গরম পানীয় এটি।
কফিয়া গাছের ফল থেকে বীজ আলাদা করে তা থেকে সবুজ কফি বীজ তৈরি করা হয়। বীজগুলো ভাজা হয় এবং মিহি করে গুড়ো করা হয়। এরপর গরম পানিতে ফিল্টার করে এক কাপ কফি তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত গরম গরম পরিবেশন করা হয়, তবে ঠাণ্ডা বা বরফযুক্ত কফিও সহজলভ্য। কফি বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত এবং পরিবেশন করা যায় (যেমন, এসপ্রেসো , ফ্রেঞ্চ প্রেস , ক্যাফে ল্যাটে অথবা পূর্ব প্রস্তুতকৃত টিনজাত কফি )। কফির তিক্ত স্বাদ কমাতে বা স্বাদ বাড়াতে প্রায়ই চিনি , কৃত্রিম মিষ্টিকারক, দুধ এবং ক্রিম ব্যবহৃত হয়।
পুরোনো কিংবদন্তী অনুযায়ী, নবম শতকে কালদি নামের একজন ছাগল পালক প্রথম তার ছাগলদের বেরি জাতীয় গাছ থেকে ফল খেতে দেখে। পরবর্তীতে সে লক্ষ্য করে যে তার ছাগলগুলো সারারাত না ঘুমিয়ে পার করে দেয়।
একদল সন্ন্যাসীকে তার পর্যবেক্ষণ জানানোর পর ঐ ফল থেকে পানীয় তৈরি করে তারা; উদ্দেশ্য ছিল সারারাত জেগে প্রার্থনা করা।
কফিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। এগুলো আমাদের দেহের কোষগুলোকে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ ও রাসায়নিকের মিশ্রণ ঠেকাতে সাহায্য করে। ছোট ছোট অনেক উপকারিতার সঙ্গে সঙ্গে দিনে তিন কাপ কফি পানে আয়ু বাড়াবে এবং হার্ট অ্যাটাক সহ অনেক জটিল রোগের সম্ভাবনা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা। ইউরোপীয় ১০ টি দেশের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের ওপর এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা চালিয়ে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়, এক কাপ অতিরিক্ত কফি মানুষের আয়ু বাড়াতে পারে। হৃদরোগ এবং পাকস্থলীর রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে।
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত, যারা নিয়মিত কফি পান করেন তারা মারাত্মক সব অসুখ যেমন লিভার ক্যান্সার, স্ট্রোক, ডিপ্রেশন এবং আলঝাইমার থেকে দূরে থাকেন। এতে থাকা নানা উপকারী উপাদান এসব রোগের থেকে আপনাকে মুক্ত থাকতে সাহায্য করবে।
প্রতিদিন দুই কাপ পর্যন্ত পান করতে পারেন। এর বেশি পান না করাই ভালো। এই অভ্যাস আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে। তবে পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যায় কফি পান না করাই ভালো।
স্নায়ু উত্তেজক হিসেবে, অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে ক্যাফেইনের কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও দেখা যায়।
গর্ভবতী অবস্থায় ক্যাফেইন গ্রহণ কমিয়ে আনা ভাল। শিশু জন্মের সময় কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়ার সাথে ক্যাফেইন গ্রহণের উচ্চমাত্রার সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হয়।
অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফেইনের কারণে গর্ভপাত হতে পারে বলেও ধারণা করা হয়।