Business Talk

উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে করলা এর ভূমিকা

করলা

শাকসবজি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা প্রদানকারী খাদ্য, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও রোগ প্রতিরোধের জন্য খুবই উপকারী। শাকসবজি মহান আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত। এমন অত্যন্ত উপকারী অতি-পরিচিত একটি সবজি হলো করলা। করলা এমন সব উপাদান রয়েছে যা মানুষের উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার হজম শক্তি বৃদ্ধি, চোখের নানা সমস্যা ও চর্মরোগ প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা পালন করে। করলার তিতা স্বাদ সবার পছন্দের না হলেও এর অনেক গুণ। নিয়মিত করলা খাওয়ার অভ্যাস করলে পাওয়া যায় প্রচুর পুষ্টি উপাদান । করলায় রয়েছে পালং শাকের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালসিয়াম এবং কলার চেয়েও দ্বিগুণ পটাশিয়াম। তাই খাদ্যতালিকায় নিয়মিত করলা রাখুন।

 

করলা (করল্লা, উচ্ছা, উচ্ছে) এক প্রকার ফল জাতীয় সবজি। ইংরেজিতে একে Balsam pear, alligator pear, bitter gourd, bitter melon, bitter cucumber ইত্যাদি বলা হয়। করলা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Momordica charantia যা Cucurbitaceae পরিবারভুক্ত এক প্রকার লতা জাতীয় উদ্ভিদ। এছাড়া ওকিনাওয়ার আদি ভাষা থেকে উদ্ভূত ‘গয়া’এবং সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত ‘কারাভেলা’ নাম দুটিও ইংরেজি ভাষায় প্রচলিত। করলার আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ, যা ১৪শ শতাব্দিতে চীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

 

প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় আছে ২৮ কিলোক্যালরি, ৯২ দশমিক ২ গ্রাম জলীয় অংশ, ৪ দশমিক ৩ গ্রাম শর্করা, ২ দশমিক ৫ গ্রাম আমিষ, ১৪ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম লোহা ও ৬৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।

 

আসুন জেনে নেই করলার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-

করলা একটি লো ক্যালোরি সম্পন্ন খাবার। এছাড়া লো ফ্যাটের খাবারও করলা। ওজন কমানোয় যাদুকরী ভূমিকা পালন করে করলা। করলার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে ফুসফুস ভালো থাকে। এই রস অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস ও গলার প্রদাহে উপকার করে। করলার রস ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে এবং নতুন কোষ তৈরি হতে দেয় না। এই সবজিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ আছে, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। শরীর থেকে কৃমি দূর করতেও করলা কাজ করে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব মলিকুলার সায়েন্স ২০১৭-র রিপোর্ট অনুযায়ী, উচ্ছে বা করলা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি-এর মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। যা ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। করলা উচ্চরক্তচাপ ও চর্বি কমায়। এতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুল ভালো রাখে। বার্ধক্য ঠেকিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিন তৈরি করে রক্তের উপাদান বাড়াতে করলার জুড়ি মেলা ভার। রক্তশূন্যতায় ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য উত্তম পথ্য করলা। করলায় রয়েছে রক্তে চিনি কমানোর উপাদান। ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।

 

করলার রস অতিরিক্ত সেবনে পেটব্যথা, ডায়রিয়া হতে পারে। ডায়াবিটিস রোগী এবং যে কোনও ওষুধ সেবনকারীরা করলার রস বা উচ্ছে খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আয়ুর্বেদ অনুসারে, করলার রস অতিরিক্ত সেবনে শুক্রাণুর গুণমান হ্রাস পায়। তাই আপনি যদি সন্তানের জন্ম দেওয়ার কথা ভাবেন, তাহলে এই রস না খাওয়াই ভালো। গর্ভবতী মহিলা এবং হৃদরোগীদের করলার রস খাওয়ার আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। এই করলার সাথে কিছু জিনিস খেলে হতে পারে বিপদ। তাই করলা খেলে এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন।

 

দুধ

দুধ একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। তবে করলা খেলে বা এর রস পান করলে দুধ পান করা থেকে দূরে থাকুন। এটি স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। করলা ও দুধ একসাথে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা জ্বালাপোড়া হতে পারে।

আম

করলার সাথে স্বুসাদু ফল আম খেলে ক্ষতি হতে পারে। এই দুইটি একসাথে খেলে হজমে সমস্যা হবে। অ্যাসিডিটি, জ্বালাপোড়া, বমি বমি ভাবের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

মুলা

মুলা আর করলার কাজ একেবারেই আলাদা। তাই এই দুই সবজি একসাথে খাওয়া উচিত নয়। এতে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।

ঢ্যাঁড়স

ঢ্যাঁড়স ও করলা একসাথে না খাওয়াই ভাল। এতে পেটের সমস্যা দেখা দেয়।

দই

করলা এবং দই দুটোই স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তবে এই দুই স্বাস্থ্যকর উপাদান একসাথে খেলে হতে পারে বিপত্তি। এতে ত্বকের সমস্যা দেখা দেবে।

 

এমনতি উচ্ছে বা করলা খুবই স্বাস্থ্যকর। কিন্তু কয়েকটি নিয়ম মেনেই এটি খাওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *