Business Talk

এই গরমে ইফতারিতে রাখুন তরমুজ

এই গরমে লাল টকটকে এক ফালি তরমুজ দেবে শীতল অনুভূতি। তাই তো সতেজ থাকতে  এই গরমে রসালো ফল  তরমুজের চাহিদা সব থেকে বেশি।  রমজান মাস চলছে। সারাদিন রোজা থাকার ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের তৃষ্ণাও বেশি পেয়ে থাকে। সেইসঙ্গে শরীরে পানিশূন্যতারও সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে তরমুজ খেতে হবে। সাহরিতে যেহেতু ফল খাওয়ার মতো অত বেশি সময় মেলে না সব সময়, তাই ইফতার বা ইফতার পরবর্তী সময়ে রাখতে পারেন এই ফল। ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এই ফল আপনাকে রোজায়ও সতেজ রাখতে কাজ করবে।কেবল প্রশান্তি পেতেই নয়, স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায়ও তরমুজ এগিয়ে। তরমুজে আছে লাইকোপেন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও পানি। রূপচর্চায় ব্যবহার বা খাওয়া—দুভাবেই তরমুজের উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।

এক কাপ তরমুজের টুকরা খেলে আপনি প্রায় ৪৫ ক্যালরি শক্তি পাবেন। চিনি বা শর্করা, এক গ্রাম পরিমাণ আঁশ এবং শূন্য পরিমাণ চর্বি বা ফ্যাট পাবেন ১০ গ্রামের মতো। এই পরিমাণ তরমুজ খেয়ে আপনি প্রতিদিন ভিটামিন এ–র চাহিদার ৭ শতাংশ ও ভিটামিন সি এর ২১ শতাংশ পূরণ করতে পারবেন।

গরমের ফল তরমুজে আছে পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, সি ও বি। এ ছাড়া এই ফলে রয়েছে লাইকোপেন ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। মজার ব্যাপার হলো, লাইকোপেনের উপস্থিতির কারণেই এমন লাল টকটকে হয়ে থাকে তরমুজ। আর এসব উপাদানের উপকারিতাও কিন্তু বিশাল। গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট স্ট্রোকের মতো ঝুঁকি কমায় আর উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তরমুজে ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম আর রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে, তরমুজে থাকা উপাদান লাইকোপেন মানবদেহের কয়েক ধরনের ক্যানসারের বিরুদ্ধে খুব ভালো কাজ করে।

গরমে ঘামের কারণে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। রোজায় সেই ঘাটতি দিনের বেলা মেটানো সম্ভব হয় না। এমন অবস্থায় ইফতারে রাখতে পারেন তরমুজ।

তরমুজে পানির পরিমাণ ৯২ ভাগ। তাই শরীরকে ঠান্ডা করতে ও পানিশূন্যতা কমাতে তরমুজ অতুলনীয়।তবে খেয়াল রাখবেন, তরমুজ কিন্তু পানির বিকল্প নয়। তাই ইফতারের পর পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।

যেসব খাবার খেলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, তার মধ্যে একটি হলো রসাল ফল তরমুজ। তরমুজ সি ও বি৬-এ সমৃদ্ধ। আর এ দুটি উপাদান শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। তাই গরমের এই সময়ে বেশি বেশি খেতে হবে তরমুজ।

গরমের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। তাই গরমে হঠাৎ করেই হতে পারে হিট স্ট্রোক। তরমুজ মস্তিষ্ক ও শরীরকে রাখে ঠান্ডা আর শক্তি সঞ্চার করে; যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

তরমুজের আরেকটি গুণ হলো এটি চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন সি চুল ও ত্বকে শক্তি সঞ্চার করে। জার্মানির একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, লাইকোপেন ও বিটা ক্যারোটিন ত্বককে রোদে পোড়া থাকে রক্ষা করে। তাই বলা যায়, রোদে পোড়া ত্বকের একটি ভালো সমাধান তরমুজ । এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ভিটামিন এ; যা ত্বকের জন্য খুব উপকারী। ত্বকের ক্ষয় কমানো ও নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে ভিটামিন এ। এক চামচ তরমুজের রস ও টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ও মলিন ত্বকে দারুণ কাজ করে এটি। বলাই যায়, খাওয়া ছাড়াও রূপচর্চায় এই ফল বিশেষ কার্যকর।

তরমুজে থাকে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এই উপাদান হার্টকে সুস্থ রাখে ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমায়। এ ছাড়া এ ফলে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড ব্লাড প্রেশার কমাতে দারুণ কাজ করে।

আমরা সবাই জানি, চোখের সুস্থতার জন্য ভিটামিন এ–র বিকল্প নেই। আর এক ফালি তরমুজেই আপনি প্রতিদিনের প্রয়োজনের ৯-১১ ভাগ ভিটামিন এ পেয়ে যাচ্ছেন; যা আপনার চোখের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখবে; বাড়াবে দৃষ্টিশক্তি।  তাই ইফতারের আয়োজনে তরমুজ পাতে রাখুন।

তবে তরমুজ খেতে হবে শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরমুজ ফাইবারে ভরপুর। তাই অতিরিক্ত তরমুজ খেলে ডায়রিয়াসহ পেটের নানা রোগ দেখা যেতে পারে।

তরমুজে রয়েছে ‘সরবিটল’ নামের একটি উপাদান। এই উপাদানের কারণে বেশি তরমুজ খেলে অম্বল ও বদহজমের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে আপনার।

লাইকোপিন নামক রাসায়নিকের কারণে তরমুজের রং গাঢ় ও উজ্জ্বল প্রকৃতির হয়ে থাকে। লাইকোপিন একপ্রকার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলে পেটের নানা গন্ডগোল দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে হতে পারে হজমের সমস্যাও।

তরমুজে শর্করার পরিমাণ খুব বেশি। প্রতিদিন তরমুজ খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। তরমুজে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় তরমুজ খাওয়ার পাশাপাশি পানি পান করার পরিমাণও বেশি হলে শরীরে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে আপনার ‘ওভার-হাইড্রেশন’ হয়ে যেতে পারে, যা কিডনির বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে ক্যালোরির পরিমাণ প্রায় ৬ গ্রাম। তাই ১ দিনে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত তরমুজ হজম করা সম্ভব। এতে শরীরে ঢোকে ১৫০ গ্রাম ক্যালরি, যা শরীরের জন্য যথেষ্ট। এর থেকে বেশি তরমুজ খেলেই সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *