Business Talk

আসছে রমজান আর বাড়ছে পণ্যের দাম

প্রতিবছর রমজান এলেই বাড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। এখনই তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। রোজার এখনো ১৮-১৯  দিন মতো বাকি। এর মধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে দাম। বিশ্ববাজারেই পণ্যের দাম চড়া। চাল, ডাল, চিনি, গম, গুঁড়া দুধ প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারেই বেশি। অথচ সারা দুনিয়ায় ধর্মীয় উপলক্ষ বা উৎসবের সময় জিনিসপত্রের দাম বরং কমে। উৎসব ঘিরে ইউরোপ-আমেরিকায় ছাড়ের হিড়িক পড়ে যায়। মাসখানেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় উৎসব। অনেকে বছর ধরে এ সময়টার জন্যই অপেক্ষা করে। সারা বছরের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে রাখে তারা। ছাড় আর সেলের এ রীতি দুনিয়াজোড়া, ব্যতিক্রম মনে হয় শুধু বাংলাদেশ। এখানে উৎসবের আগে পণ্যের দাম বাড়ে।

 বাংলাদেশে রমজান মাসে চাহিদা বেড়ে যায় এমন পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৫-৩০ শতাংশ বাড়তি থাকবে বলে আশঙ্কা করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গত বছরের দামের সাথে এ বছরের দাম যদি এক হয়, তারপরও ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে পণ্যের দাম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি হবে।রমজান মাসে বাজারে তেল, ছোলা, খেজুর, চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়।

তবে পণ্যের বাজারে কোন ধরনের ঘাটতি নেই বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। তারা বলছে যে, বাজারে পণ্যের ঘাটতি না থাকলেও, ব্যবসায়ীরা যোগসাজস করে পণ্যের দাম বাড়ায় যাতে বাজার অস্থিতিশীল করা যায়।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, বাজারে বর্তমানে ছোলাসহ সব ধরনের ডাল, খেজুর এবং চিনির ঘাটতি রয়েছে, যার কারণে এরইমধ্যে এসব পণ্যের দামও বেড়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, এরইমধ্যে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যেরই দাম এক মাস আগের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেগুলোও রয়েছে।

রাজধানীর নুরেরচালা এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী নূরে আলম নয়ন বলেন, বিভিন্ন মানের ছোলা ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগের তুলনায় ছোলায় কেজিতে ১০-১৫ টাকার মতো বেড়েছে বলে জানান তিনি।খেজুরের ক্ষেত্রে মান ভেদে দাম, অনেক ক্ষেত্রে, দ্বিগুন হয়েছে বলে জানান মি. আলম।

তিনি বলেন, “আগে যেটা আপনার ৫০০-৬০০ টাকায় আনা যাইতো, অইটা এখন ৮০০-৯০০ টাকা লাগে। এক হাজার টাকাও লাগে কোন জায়গায়।”

এছাড়া বিভিন্ন রকমের ডালের দাম বেড়েছে। অ্যাংকার(এক ধরনের ডাল), খেসারি- এসব ডালের দাম বেড়েছে। মসুরের ডাল কেজি প্রতি ২-৪ টাকা বেড়েছে।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, ভাল মানের ছোলা, যেটা গত বছর প্রতি মণ তিন হাজার টাকা করে ছিলো, সেটি এবার বেড়ে ৩৬০০ টাকা হয়েছে।তবে রোজার সময় ছোলার দাম আরো বেশি বাড়বে বলে জানান তিনি।মসুরের ডাল মান ভেদে ৮৮ টাকা থেকে শুরু করে ১৩২ টাকা কেজি করে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, কিছু কিছু পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারেও বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয় চিনির দামের কথা। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন চিনির দাম ৫২০ ডলার করে। এক মাস আগেও এই দাম ৪৪০ ডলার করে ছিল।

এই দামে চিনি আমদানির পর, এর সাথে পরিশোধন ব্যয়সহ আরো কিছু ব্যয় যুক্ত হয়ে এর দাম বাড়বে বলে জানানো হয়।

ঘাটতি আছে?

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বেশি থাকার কারণে এবং ছোট ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে না পারায় আমদানি কমে গেছে, যার কারণে বন্দরে এসব পণ্যের সরবরাহ কম।

চট্টগ্রাম কাস্টমস এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে খেজুর আমদানি করা হয়েছিল ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। আর ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একই সময়ে খেজুর আমদানি করা হয়েছে ৩১ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। এই সময়ে এই পণ্যটি গতবারের তুলনায় ৩১% কম আমদানি করা হয়েছে।

একই সময়ে চিনি আমদানি করা হয়েছিলো চার লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টনের মতো। আর এ বছর চিনি আমদানি করা হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন।

২০২১-২২ সালের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ছোলা আমদানি করা হয়েছিল এক লাখ ৪২ হাজার টন। আর চলতি বছর এই সময়ে ছোলা আমদানি করা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টনের মতো। যা গতবছর একই সময়ে তুলনায় ৭১ শতাংশ কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *