Business Talk

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা নিয়ে যা বলেছেন নবীজি

আজওয়া

আজওয়া খেজুর ( Ajwa Date) হল খেজুরের একটি পালিত ভাণ্ডার, যা একচেটিয়াভাবে সৌদি আরবের মদিনায় জন্মে । এটি দেখতে গাঢ় বাদামী থেকে প্রায় কালো রঙের, ডিম্বাকৃতি, মাঝারি আকারের খেজুর। খেজুরগুলি নরম এবং ফলদায়ক। প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রিয় ফল খেজুর। পবিত্র কোরআনে ২৬ বার খেজুরের উল্লেখ রয়েছে। পবিত্র কোরআনে বৃক্ষ-তরুলতার বিবরণ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি জমিনে উৎপন্ন করেছি শস্য-আঙুর, শাক-সবজি, জয়তুন ও খেজুর বৃক্ষ।’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ২৭)

 

আবারও বলা হয়েছে, ‘খেজুর ও আঙুর থেকে তোমরা সাকার ও উত্তম খাদ্য তৈরি করো।

নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য এতে নিদর্শন আছে।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৬৭)

বেশির ভাগ মানুষ ইফতারের দস্তরখানে খেজুর রাখেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইফতারে খেজুর খেতেন। তিনি বলতেন, ‘যদি কারো ঘরে কিছু খেজুর থাকে, তবে তাকে গরিব বলা যাবে না।’খেজুরের মধ্যে মদিনার আজওয়া খেজুর উৎকৃষ্টমানের। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক পছন্দ করতেন আজওয়া খেজুরের। এই খেজুরের অনেক উপকারীতার কথাও তিনি বলেছেন হাদিসে। এখানে এখানে আজওয়া খেজুরের উপকারিতা-সম্পর্কিত কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো—

 

১. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আজওয়া জান্নাতের ফল, এতে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক রয়েছে…।’ (তিরমিজি: ২০৬৬)

 

২. হজরত সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও জাদুটোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি: ৫৭৬৮)

 

৩. আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘মদিনার উঁচু ভূমির আজওয়া খেজুরে আরোগ্য রয়েছে।’ অথবা তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে এই খেজুর আহার করা বিষনাশক (প্রতিষেধক)।’ (মুসলিম: ৫১৬৮)

 

৪. আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘সকালে সবার আগে (খালি পেটে) (মদিনার) উঁচু ভূমির আজওয়া খেজুর খেলে তা (সর্বপ্রকার) জাদু অথবা বিষক্রিয়ার আরোগ্য হিসেবে কাজ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৫৯২) এখানে উঁচু ভূমি বলতে বোঝানো হয়েছে মদিনার পূর্ব দিকের কয়েক মাইল দূরের কয়েকটি গ্রাম।

 

৫. হজরত সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি তাঁর হাত আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি তাঁর শীতলতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেন, ‘তুমি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। কেননা, সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তা দিয়ে তোমার জন্য সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়।’ (আবু দাউদ: ৩৮৩৫)

 

৬. উরওয়া (রহ.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) পরপর সাত দিন সাতটি আজওয়া খেজুর খেয়ে সকালের উপবাস ভাঙার অথবা এই অভ্যাস তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২৩৯৪৫)

 

৭. হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর প্রতিদিন আহার করে, তার পাকস্থলীর প্রতিটি রোগ নির্মূল হয়ে যায়।’ (কানজুল উম্মাল: ২৮৪৭২)

 

আজওয়া খেজুরের পুষ্টিউপাদান উপকারীতা

 

আমিষ, শর্করা, প্রয়োজনীয় খাদ্য আঁশ ও স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট রয়েছে আজওয়া খেজুরে। এছাড়া ভিটামিন এ, বি৬,সি, ৬৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৭.৩ মিলিগ্রাম লৌহ  এবং অন্যান্য উপাদান আছে। ভিটামিন ‘এ’র গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘ক্যারোটিন’ও রয়েছে আজওয়া খেজুরে। ক্যারোটিন চোখের সুস্থতার জন্য জরুরি ও উপকারী।

 

উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাটসম্পন্ন আজওয়া খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকর।আছে ৭৭.৫ শতাংশ কার্বহাইড্রেট, যা খাদ্যের বিকল্প শক্তি হিসেবে কাজ করে।

 

এই খেজুরের ফাইবার কোলেস্টেরল থেকে মুক্তি দেয় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি হাড়, দাঁত, নখ, ত্বক, চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

 

পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি ও এজমায় উপকারী এই  খেজুর। তাছাড়া ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে।

 

অন্তঃসত্ত্বারা সন্তান জন্মের সময় আজওয়া খেজুর খেলে জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন ও প্রসারণ ঘটিয়ে প্রসব হতে সাহায্য করে। প্রসব-পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তক্ষরণ কমিয়ে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *